১৪ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৮শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

‘আপনি তো মারা গেছেন, তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে’

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
নেত্রকোনার পূর্বধলায় জীবিত তিন নারীকে মৃত দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তিন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এতে দুজনের বয়স্ক ও একজনের বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন দুই ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য (মেম্বার), সমাজসেবা অফিসার মিলে তাদের মৃত দেখিয়ে তাদের জায়গায় অন্যদের ভাতাভোগীর সুবিধা করে দিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানদের দাবি, তাদের ভুলবশত এমনটি হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা হলেন পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গড়ুয়াকান্দা গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে হযরত আলী (৭১), হোগলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জামিরাকান্দা গ্রামের মৃত সুরুজ আলী ফকিরের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৭৭) ও পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর মেয়ে খাদিজা আক্তার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হযরত আলী দীর্ঘদিন ধরে বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তবে গত দুই সেশনে তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় বিষয়টি সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়রাম্যান কমল কৃষ্ণ সরকারের দেওয়া প্রত্যয়ন মোতাবেক তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তার নামে বরাদ্দের ভাতা অন্য উপকারভোগীর নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
অপর ভুক্তভোগী জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেতেন। হঠাৎ ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। তখন তিনি জানতে পারেন, তাকেও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকনের প্রত্যয়নে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে নুর মিয়ার মেয়ে হালিমা খাতুনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হালিমা এক বছর ধরে ভাতা পাচ্ছেন।
পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার। ২০১৯ সালে যাচাই-বাছাই শেষে বিধবা ভাতার কার্ড পান। এরইমধ্যে ব্যাংক ও পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করেছেন। এই ভাতার টাকায় তিনি নিজের জীবনযাপনের ব্যয় বহন করতেন। গতবছরের মার্চ মাসের পর থেকে তিনি সরকারের দেওয়া ভাতা পাচ্ছিলেন না। ঘটনাটি জানতে সমাজসেবা অফিসে খবর নিতে গেলে তাকে জানানো হয়, ‘আপনিতো মারা গেছেন, তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে’।
পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার জানান, একই গ্রামে হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তি। একজন মারা গেলে ভুলবশত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। ভুল সংশোধনের জন্য সমাজসেবা অফিসে কাগজ পাঠানো হয়েছে।
হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন বলেন, ‘আমার অজান্তে ওয়ার্ড মেম্বার ভুলবশত এমনটি করেছেন। ভুল সংশোধনের জন্য কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি। খুব শিগগির বিষয়টির সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে পূর্বধলা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা মৃত্যু সনদ ইস্যু করে প্রতিস্থাপনের জন্য সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভাতাভোগী দুজনকে মৃত দেখিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। আমরা যেহেতু প্রকৃত বিষয়টি জানতে পেরেছি, কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধনের ব্যবস্থা করে দেবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান বলেন, ভাতাভোগী একজনের নাম কেটে দিয়ে অন্যজনের নামে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এর আগেও হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে খাদিজা আক্তার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি সংশোধনের জন্য সমাজসেবা অফিসকে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়