১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

বাজেটে নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ হয় না

মাহমুদুল হক আনসারী
বরাবরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের রয়েছে নানা রকমের চিন্তা ও টেনশন। এদের মধ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি আগামী বাজেট নিয়ে সবচেয়ে উৎকণ্ঠায়। একদিকে মূল্যস্ফীতি ও অফিসের বেতনের সমন্বয়, অন্যদিকে পারিবারিক লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের আকাক্সক্ষা নিয়ে বৃহৎ বাজেট নিয়ে মধ্যবিত্তদের প্রত্যাশা অন্যান্য শ্রেণির তুলনায় কিছুটা ব্যতিক্রম। মধ্যবিত্ত শ্রেণির কয়েকজনের সঙ্গে বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে আগামী বাজেটে তাদের প্রত্যাশার দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকল নানাভাবে সামাজিক প্রেসারে পরবর্তী সময়ের ধাক্কায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের খেয়ে-পরে টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের বেশির ভাগের মধ্যে যাদের ঘরে কর্মক্ষম ব্যক্তি মাত্র একজন এবং পরিবারের সদস্য তিনের অধিক, তাদের আয়ের সিংহভাগ অর্থ চলে যায় পরিবারের ভরণ-পোষণের পেছনে। এদের মধ্যে যাদের পরিবারে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা একাধিক তারা অন্নসংস্থান ও বাসস্থানের বাইরেও দেখছেন নানা ধরনের স্বপ্ন। অনেকের স্বপ্ন ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া, যাদের ফ্ল্যাট আছে তাদের স্বপ্ন নিজস্ব একটি গাড়ি থাকা, অনেকের আবার স্বপ্ন নানা ধরনের আভিজাত্য পণ্যে নিজের স্বপ্নের ফ্ল্যাটকে সাজিয়ে তোলা। নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনের বাজেটকে সামাল দিয়ে জাতীয় বাজেটের দিকে তাকিয়ে মধ্যবিত্ত এ শ্রেণি ভাবছেন, অদূরে তাদের স্বপ্নপূরণের কোনো সম্ভাবনা আদৌ আছে কিনা। জাতীয় বাজেট এলে শুরুতেই এক ধরনের নির্লিপ্ততা কাজ করে। জাতীয় বাজেটে হয় সুবিধা পায় একেবারে যারা উচ্চবিত্ত তারা, আর না হলে যারা নিম্নবিত্ত তারা কিছুটা সুবিধা পায়। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য শুল্ক ছাড় পায়, নানা বিনিয়োগে সুবিধা পায়। অন্যদিকে নিম্নবিত্তের যারা তারা ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য কেনার সুবিধাভোগীদের আওতাভুক্ত হতে পারে, অনেকে আবার ভাতা পায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাবে বাজেট আসলে মধ্যবিত্তদের জন্য আলাদা করে কিছু থাকে না। সমাজে যেভাবে প্রতিমুহূর্তে মধ্যবিত্ত একজনকে খাপ খাইয়ে চলতে হয়, তেমনি বাজেটেও এই দুই শ্রেণির মাঝে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক একটি জায়গা বেছে নিয়ে টিকে থাকতে হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে। উচ্চবিত্ত বাঁচে স্বপ্ন পূরণে, নিম্নবিত্ত দুঃস্বপ্নে আর মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকা স্বপ্ন লালনের মধ্য দিয়ে। প্রতিটি বাজেটে মধ্যবিত্তের প্রত্যাশা থাকে বাজার স্বাভাবিক হবে, গরুর মাংসের দাম কমবে, ফ্ল্যাট সস্তায় পাওয়া যাবে, গাড়িতে শুল্ক হার হ্রাস পাবে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সহনীয় হবে- এসব নিয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল না ঘটলেও বাজেটের পর বাজেট তাদের প্রত্যাশাই বাঁচিয়ে রাখে আগামী আরেকটি অর্থবছরে নতুন কোনো স্বপ্ন দেখার কিংবা পুরনো স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা করার জন্য। বাজেটে মধ্যবিত্তের প্রত্যাশা থাকে তাদের সন্তানদের কর্মসংস্থান হোক। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবসমাজ যেন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। প্রাইভেট স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার ব্যয় যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে। মধ্যবিত্তদের চাওয়া-পাওয়া তাদের আয় ও ব্যয় যেন সমন্বয়ের মধ্যে চলে। বাজেট নিয়ে মূলত নাগরিকদের মধ্যে বেশি একটি আলোচনা-সমালোচনা হয় না। কারণ বাজেট এটি একটি দেশে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর ঘোষণা হয়ে থাকে। বাজেটকে গতানুগতিকভাবে বললেও বেশি বলা হবে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানাদিক বিবেচনায় একটি দেশের বাজেট তৈরি হয়। তাই বাজেট যায়, বাজেট আসে কিন্তু মধ্যবিত্তের প্রত্যাশা পূরণে তেমন একটি পরিবর্তন ও আশার আলো প্রতিষ্ঠিত হয় না।
মাহমুদুল হক আনসারী : লেখক ও গবেষক, চট্টগ্রাম।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়