১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

পরিবেশ দূষণে বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যে

পরিবেশ দূষণ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বায়ু, অনিরাপদ পানি, বাজে পয়ঃনিষ্কাশনের মতো দূষণের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হওয়ার তথ্য রয়েছে। এমন ভয়াবহ তথ্য আমাদের উদ্বেগ বাড়াবে- এটাই স্বাভাবিক। আশার কথা, পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে- এটি ইতিবাচক। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৪ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘উষ্ণায়ন, খরা ও মরুকরণ রোধে ভূমি ও জলাশয় রক্ষার এখনি সময়’ বিষয়ক জনসচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে দূষিত শহরের তালিকায় বারবার উঠে এসেছে ঢাকা। এখনই দূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য দূষিত বায়ু ভয়ংকর হয়ে উঠছে দিন দিন। বিশেষ করে শহরে নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলা যুক্ত হয়। যানবাহনে ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে নির্গত কার্বন দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া বর্জ্য পোড়ানোর কারণে দূষিত হচ্ছে বাতাস। শিল্পকারখানার ধোঁয়া এবং রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম নতুন কিছু নয়। শহর ও আশপাশের এলাকায় যেখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে বাতাস। উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে শুধু ঢাকায় বসবাসকারীদের গড় আয়ু কমেছে ৭ দশমিক ৭ বছর। দূষিত বায়ুর কারণে এখানকার জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় একিউআই ইনডেক্সের ভয়াবহ মাত্রা ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণ অবিলম্বে আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ঢাকা সিটিতে বায়ুদূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কারণ প্রধান। যাতে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেগুলো হলো- ইটভাটা, মোটরযানের কালো ধোঁয়া ও যথেচ্ছ নির্মাণকাজ। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ বাড়ছেই। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ ঘটছে। বুড়িগঙ্গা নদীর অবস্থা দেখলেই ঢাকার পরিবেশ দূষণ কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তা বুঝতে কারো পরিবেশবিদ্যায় ডিগ্রিধারী হওয়ার প্রয়োজন নেই! অথচ এই নদীগুলোতেই এক সময় দেখা যেত রং-বেরঙের পালতোলা নৌকার। মানুষ এগুলোর স্বচ্ছ ও সুন্দর পানি ব্যবহার করত দৈনন্দিন কাজে। ঢাকা শহরের নদীর ওপর দিয়ে আজ নৌকা পারাপারেও দম আটকে আসে পানির দুর্গন্ধে! শিল্পবর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য ও অন্যান্য বর্জ্যরে মাধ্যমে যেভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তাতে দূষণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে জীববৈচিত্র্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশ আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। প্রকৃতিকে আশ্রয় করেই সভ্যতার সূচনা হয়েছে এবং বিকাশ লাভ করছে। কিন্তু প্রকৃতির ওপর যখন অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে, তখনই পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকলে আমরা মুক্ত থাকব বিভিন্ন জটিল-কঠিন রোগ, দুর্যোগ ও মহামারি থেকে। পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে আমরা থাকব সুরক্ষিত। আসুন পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়