২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

কোটা রায় : গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আবারো শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে। প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, পুরো কোটা বাতিল না করে কেবল নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের কোটা বাতিল করেছিল। এটা আজকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এখন থেকে এসব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের সন্তানদের নিয়োগে আর কোনো বাধা নেই। এই রায়ের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের এক দিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছিল, ‘সরকার সব সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৭/০৩/১৯৯৭ তারিখের সম(বিধি-১) এস-৮/৯৫ (অংশ -২)-৫৬(৫০০) নম্বর স্মারকে উল্লিখিত কোটা পদ্ধতি নি¤œরূপভাবে সংশোধন করিল: (ক) ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হইবে; এবং (খ) ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হইল।’ এ আদেশ ‘অবিলম্বে কার্যকর হইবে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল পরিপত্রে। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে কোটা বাতিল করা না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল রোববার তৃতীয় দিনের মতো কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৮ সালে আন্দোলনের শুরু থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা নিয়ে অনেকের মনেই ভ্রান্ত ধারণা ছিল। প্রথমেই মনে রাখা দরকার এই আন্দোলন কোটাপ্রথা পুরোপুরি বন্ধের জন্য ছিল না, এটি মূলত যে অযৌক্তিক কোটা ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রচলিত আছে, তা সংস্কারের জন্য ছিল। একটি স্বাধীন দেশের জনগণ হিসেবে সবার সমঅধিকার পাওয়ার কথা, কিন্তু কোটা ব্যবস্থা দেখলে জনগণের অধিকারের সমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অতি নগণ্য সংখ্যক মানুষ কয়েকগুণ বেশি সুবিধা পাচ্ছে চাকরির ক্ষেত্রে। বিশেষ নিয়োগ তো সাধারণদের পুরোপুরি বঞ্চিত করে করা হয়ে থাকে। বিসিএসের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি ব্যাংকেও এ ধরনের নিয়োগ হয়ে থাকে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যোগ্য এবং মেধাবী কর্মকর্তাদের প্রয়োজন। তাই সরকারের উচিত কোটা নিয়ে তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে সার্বিক বিবেচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া, যা সবার জন্য সমতা ও দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়