১৯শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জরুরী

দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক ওষুধের দাম। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো ওই সব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। গত দুই বছরে নানা অজুহাতে প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পর আবার শুরু হয়েছে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। এদিকে বাড়তি দামের কারণে ওষুধ না কিনতে পেরে রোগী ও তাদের পরিবারের মধ্যে বাড়ছে নানা দুশ্চিন্তা ও হতাশা। গত রবিবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ওষুধের দাম কেউ বেশি রাখলে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, প্রায় ১৩ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ খরচের ভয়ে চিকিৎসা থেকে দূরে থাকেন। ওষুধের দাম এখন ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, যা মানুষকে আরো অস্থির করে তুলছে। কেবল ওষুধের দাম বৃদ্ধি নয়, লক্ষ্য করলে দেখা যায় একই ওষুধের একেক কোম্পানির একেক দাম। প্রায় আড়াইশ ওষুধ কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিন-চারটি কোম্পানি নিজেদের মতো দাম আকাশচুম্বী করে বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। ওষুধ প্রশাসন কেন তাদের এত বেশি দাম বাড়ানোর সুযোগ দেয়, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে বছরে মোট স্বাস্থ্য ব্যয় ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওষুধের পেছনে ব্যয় হয় প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। ওষুধের পেছনে এই খরচের ৯৭ শতাংশ যায় ব্যক্তির পকেট থেকে। মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ জোগান দেয় সরকার, ১ দশমিক ২ শতাংশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী ও দশমিক ৪ শতাংশ স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা জোগান দেয়। এ কথা সত্য, ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওষুধ রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে দেশ। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক সংবাদের মধ্যে দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং সুযোগ পেলেই বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এটা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, বাজার তদারকির কেউ নেই। আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। অযৌক্তিক ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এভাবে লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, ওষুধ সেক্টরে দামের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে সরকার আরো কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়