২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

যশোরে কোরবানির ঝাঁজ আলু পেঁয়াজ আদা রসুনে

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দাম লেগেই আছে। এনিয়ে ক্ষোভের আগুনে পুড়ছেন ভোক্তা মহল। সরকারও বিভিন্ন সময় আলু-পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু মাঠ প্রশাসন সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে পারেনি। এরমধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। এই ঈদ ঘিরে চাহিদা বেড়েছে আদা, রসুন, আলু, শুকনো মরিচ ও পেঁয়াজের। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, মাংস রান্নায় প্রচুর পরিমাণে আদা, রসুন ও পেয়াজের ব্যবহার হয়। তাই ঈদকে সামনে রেখে এসব পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার না করায় ব্যবসায়ীদের কোনো সাজা হয় না। এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। তার ওপর আদা, রসুন ও পেঁয়াজের মতো নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে খুচরা বাজারেও দাম বাড়াতে হয়েছে তাদের। যশোরের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ২ সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি আদাতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মাসের শুরুতে আদার কেজি ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। তবে একসঙ্গে কয়েক কেজি আদা কিনলে ২৯৫ টাকা রাখা হয়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। মাসের শুরুতে এ পণ্যের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অন্যদিকে এলাকা ভেদে রসুনের দামে ভিন্নতা দেখা গেছে। শহর ও শহরতলীর হাট-বাজারে প্রতি কেজি রসুন ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জামরুলতলা, স্টেশন, চুয়াডাঙা বাসস্ট্যান্ড ও পুলেরহাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। আবার যশোর বড়বাজারের বরভকলা এলাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি। যদিও মাসের শুরুতে রসুনের দাম ২৫০-২৬০ টাকার মধ্যেই ছিল। ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, কোরবানির সময় বিভিন্ন মসলার পাশাপাশি আদা, রসুন ও পেঁয়াজের বেশি চাহিদা থাকে। যার কারণে মাসের শুরু থেকে এসব পণ্যের দাম আস্তে-আস্তে বাড়তে থাকে। গড় হিসেবে করলে এই ৩টি পণ্যের প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন যেই দামে কিনতে পারি, তখন তার চেয়ে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করি। কারণ বাজার থেকে এসব পণ্য কেনার পর একটা অংশ নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতি কেজিতে ৫ টাকা লাভ না করতে পারলে লোকসানে পড়তে হয়। এই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী করিম বলেন, এখন প্রতি কেজি আদা বিক্রি করছি ৩০০ টাকায়, পেঁয়াজ ৯০ টাকা। এগুলোর দাম মাসের শুরুতে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কম ছিল। আমরা বেশি দামে পণ্য কিনেছি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সালাউদ্দিন আহমদে নামে এক ক্রেতা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদের সময় পণ্যের দাম কমে, আর আমাদের এখানে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া যে গত এক দুই বছর ধরে চলছে এমন নয়। গত এক যুগের বেশি সময় ধরেই এমনটা চলছে। তিনি আরও বলেন, মাসের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় কিনেছি। এখন সেটা কিনতে হয়েছে ৯০ টাকায়। আর দুই মাস আগে রসুন কিনেছি ১৯০ টাকায়। আর এখন ৩০০ টাকায়। শুধু এ গুলো নয়, হলুদ ও মরিচের গুঁড়োর দাম বেড়েছে। আর জিরা, ধনিয়া ও এলাচ তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি জিরা ১০০০ টাকা, ধনিয়া ৮০০ টাকা আর এলাচ ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা আরিফুর ইসলাম জানান, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। আদা ২৬০ থেকে ২৬৫ টাকায়। আর রসুন ২১০ থেকে ২১৫ টাকায়। অর্থাৎ ৫ কেজির বেশি ক্রয় করলে সর্বনিম্ন দামটি পড়ে।তিনি আরও বলেন, দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম চাহিদা বেড়ে যাওয়া। ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে গরু রাজধানীতে আসে। তখন ট্রাকের চাহিদা বাড়তি থাকার কারণে ভাড়াও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বাজারের চাহিদা বেশি থাকলে কিছু-কিছু বড় ব্যবসায়ী দাম এমনিতেই বাড়িয়ে দেন। যার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়