সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো হয়ে উঠেছে অপরাধের আঁতুড়ঘর। কোথাও নিত্যপণ্যের চোরাকারবারি তো কোথাও মাদকের। এর মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টি খুবই উল্লেখযোগ্য। ভারতে এখন পর্যন্ত আটক পাচারকৃত স্বর্ণের ৭৩ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে। দেশটিতে চীন থেকে আসা স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে মিয়ানমার হয়ে। আবার মিয়ানমারেও বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাচার হওয়া স্বর্ণের সবচেয়ে বড় করিডর এখন বাংলাদেশ। শুধু স্বর্ণ পাচার পর্যন্ত এই অপরাধীরা সীমাবদ্ধ থাকে না। লেনদেনের বিতর্ক, দখলদারিত্ব এসব নিয়ে হয় খুনাখুনির মতো সহিংস কর্মকাণ্ড। সর্বশেষ দেশে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। প্রতাপশালীদের সংশ্লিষ্টতায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের বড় হাব করে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, যে পরিমাণ স্বর্ণ পাচারের সময় আটক হয়, পাচার হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই সোনা পাচারের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার সীমান্ত পথগুলো পাচারকারীদের কাছে জনপ্রিয়। যশোর ও চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিভাজন হওয়ায় এই জায়গাটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই পাচার রুটের সব স্বর্ণই কালীগঞ্জ অতিক্রম করে সীমান্তে যায়। এরপরও রহস্যজনক কারণে কালীগঞ্জসহ পুরো রুটের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে থাকে। চোরাচালান রোধে একটি চেকপোস্টও চোখে পড়ে না ঝিনাইদহ সদর থেকে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর এলাকাগুলোতে। সংশ্লিষ্ট জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা সূত্র বলছে, স্বর্ণের চোরাচালান ঠেকানো খুবই চ্যালেঞ্জের একটি কাজ। কেননা এর পেছনে অনেক বড় পর্যায়ের লোকদের হাত থাকে। তাদের চোখের কাঁটা হওয়ার চেয়ে নীরব থাকাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। এই কারবারে অনেক শিল্পপতি ও প্রভাবশালী পর্যায়ের লোক জড়িত থাকায় যাদের কেউ সন্দেহ করে না। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাকে পছন্দের লোক হিসেবে বদলি করিয়ে নেয় স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট। সেখানে তাদের নিজস্ব লোক বসানো হয়। এয়ারপোর্টেও তাদের নিজস্ব লোক থাকে। দু-একটা চালান মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে। তবে যা উদ্ধার হয়, তা মহাসমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা পানির মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এখন পর্যন্ত অনেক পাচারকারীকে ধরতে সক্ষম হলেও এর মূল হোতারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় খুনাখুনির ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু বিচার হয়নি একটি ঘটনারও। ভারতে স্বর্ণের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি বছর দেশটিতে ৯২ টন স্বর্ণের প্রয়োজন হয়। এই স্বর্ণের ওপর ১৫ ভাগ আমদানি শুল্ক ও ৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। এই কারণে বৈধ পথে স্বর্ণ আনলে তাদের তেমন লাভ হয় না। এ জন্য স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সীমান্ত বেছে নিয়েছে চোরাচালানকারীরা। এ অবস্থায় স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সীমান্তে সহিংসতা বা অরাজকতা কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই সরকারের উচিত স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এবং অপরাধী চক্রকে দমন করে মূল হোতাদের কোনোভাবেই ছাড় না দেয়া।
চক্রের মূল হোতাদের কোনোভাবেই ছাড় নয়
Previous article
আরো দেখুন
ভূমিকম্প মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি জরুরি
চলতি বছরে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে বাংলাদেশে। যদি ঘন ঘন দেশটা কেঁপে ওঠে তাহলে তো একটু ভয়ের ব্যাপার। বাংলাদেশে ভূমিকম্প একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। এর...
ঈদে ঘরেফেরা স্বস্তিদায়ক হোক
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে যেসব সড়ক ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসবের সংস্কারকাজ কুরবানির ঈদের সাত দিন আগেই শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী...