৯ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৩শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ভূমিকম্প মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি জরুরি

চলতি বছরে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে বাংলাদেশে। যদি ঘন ঘন দেশটা কেঁপে ওঠে তাহলে তো একটু ভয়ের ব্যাপার। বাংলাদেশে ভূমিকম্প একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। এর আগেও বহুবার এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত- এমন প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার। রাজধানী ঢাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। এতে প্রায় ২০ শতাংশ ভবন ধসে লাখ লাখ মানুষ আটকা পড়তে পারে বলেও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। এমন তথ্য আমাদের ভয়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। যে কোনো সময় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এতে ২০ শতাংশ বিল্ডিং কলাপস হয়ে যেতে পারে। ঢাকা শহরে লাখ লাখ লোক আটকা পড়তে পারে। অনেক লোকের মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে। তথ্য বলছে, দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সংকোচনের হার হচ্ছে প্রতি ১০০ বছরে এক মিটার। গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা হচ্ছে ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এখান থেকে ঢাকা শহর হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার। যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকাও। ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে চার লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি, যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ? ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। কিন্তু গরিব দেশগুলোতে সে ধরনের প্রস্তুতি থাকে না, ফলে এসব দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়। জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকার নাম। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অমূলক নয়। কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। উদ্বেগের কথা হলো, এ ব্যাপারে সরকারের তরফে তেমন কোনো প্রস্তুতি বা সাধারণের মধ্যেও খুব একটা সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত সম্পদ ও ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এ দুর্যোগ মোকাবিলার ত্বরিত প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়