প্রতিদিনের ডেস্ক:
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া ফুয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এক নেত্রী।বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঢাকার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক মো. শামসুল ইসলামের আদালতে মামলা করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য হাজারীবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালে আসামি ফুয়াদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১৬ সালে তাদের সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। এরপর বাদীকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে আসামি কক্সবাজার ও ঢাকার বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। কক্সবাজারে শারীরিক সম্পর্ক করার আগে কাজী ডেকে আসামির সঙ্গে বাদীর বিবাহ হয়। বিয়ের কাগজ করার কথা বললে আসামি বারবার এড়িয়ে যান। সর্বশেষ ছাত্রলীগের সম্মেলনে পর কাগজ করার কথা বললেও আসামি সেটা করেননি। এরপর ২০২৪ সালে জানুয়ারির ৩ তারিখে বাদীর সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করেন আসামি ফুয়াদ।এর আগে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ভুক্তভোগী এই নারীর বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ। আদালত মামলাটির এজাহার গ্রহণ করে এ মামলার আসামি ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের এ নেত্রীকে ৩০ জুন আদালতে উপস্থিত হতে সমন জারি করেন।জানা গেছে, স্ত্রী পরিচয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে বুধবার এ মামলাটি করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফুয়াদ হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্র ছিলেন।ফুয়াদের করা মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফুয়াদের সঙ্গে আসামি ওই নারীর ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা হতো। পরে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আসামি গত ১ ও ২ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিজেকে ফুয়াদের স্ত্রী বলে দাবি করেন। যদিও কোনো সাংবাদিককে তিনি কোনো কাবিননামা দেখাতে পারেননি।এর আগে এই ছাত্রলীগ নেতার কাছে বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি চাওয়ায় একই সংগঠনের ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক এক নেত্রী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার চেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। এ নিয়ে ‘স্ত্রী’ দাবি সাবেক নেত্রীর, ‘প্রতারণা’ বললেন ছাত্রলীগ’ নেতা শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।তবে ছাত্রলীগের এই নেতা অভিযোগ অস্বীকার করে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অ্যাপের সাহায্যে তাকে ফাঁসানো হতে পারে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তরুণীর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি জিডি করেছিলেন তিনি।অভিযোগের বিষয়ে ওই ছাত্রলীগ নেত্রী জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘তার (শাহাদাতের) সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে। আমরা দীর্ঘদিন ঢাকায় একই বাসায় ছিলাম। এখন শাহাদাত এসব অস্বীকার করছেন।’বিয়ের কাবিননামার বিষয়ে জানতে চাইলে তরুণী বলেন, ‘কাবিননামা আমার কাছে নেই। শাহাদাত আটকে রেখেছেন। যে কাজি বিয়ে পড়িয়েছেন তাকেও চিনি না। যারা সাক্ষী ছিলেন তাদেরও চিনি না। শাহাদাত এখন আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমি সামাজিক মর্যাদা (বিয়ের স্বীকৃতি) চাই।’নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ হাসান শাহাদাত বলেছিলেন, ‘তার (তরুণী) সঙ্গে পরিচয় ছিল। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে। এখন অন্য কারও প্ররোচণায় তিনি আমার ক্যারিয়ার শেষ করতে চাইছেন। মান-সম্মানের ভয়ে তাকে বলেছি কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে হলেও আমাকে যেন আর বিরক্ত না করেন। তিনি চাইছেন তার নামে যেন ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেই। এত টাকা আমি কোথায় পাবো!’‘তাকে (তরুণী) বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না’ জানিয়ে ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, ‘সব মিথ্য বলছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি তিনি বিয়ের কোনো ডকুমেন্টস দেখাতে পারবেন না। উল্টো মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আমার সম্মান নষ্ট করছেন। আমি তার নামে মানহানির মামলা করবো।’