১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খামেনি অনুগতদের আধিপত্য

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর শুক্রবার (২৮ জুন) অনেকটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন ইরানের জনগণ। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয় পাবেন। দেশটির অভিভাবক পরিষদ ২৮ জুনের এ নির্বাচনে পাঁচজন কট্টরপন্থি ও একজন অল্পপরিচিত মধ্যপন্থি প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী ৮০ জনের মধ্য থেকে এই ছয়জনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। কট্টরপন্থী প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ইরানের পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার ও প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ এবং দেশটির হয়ে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ক আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব করা সাঈদ জালিলি। একমাত্র মধ্যপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা সংস্কারবাদী শিবিরের সমর্থন পেয়েছেন। এই সংস্কারবাদী শিবির পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বৈরিতার অবসানের পক্ষে কথা বলে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এ নির্বাচনে প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেননি। কিন্তু গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে কট্টর পশ্চিমা বিরোধী খামেনি বলেছেন, “যিনি মনে করেন আমেরিকার আনুকূল্য ছাড়া কিছুই করা সম্ভব না তিনি এই দেশকে সামলাতে পারবেন না।
তার উপদেষ্টা ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এমন একজন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করুন যার মতামত সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। জনগণের উচিত এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয়া, যিনি নিজেকে সেকেন্ড ইন কমান্ড মনে করবেন। প্রেসিডেন্টের উচিত হবে না বিভেদ সৃষ্টি করা। রহিম সাফাভিও ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাবেক প্রধান। যদিও ইরানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের একটি উচ্চ আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আছে কিন্তু দেশটির প্রকৃত ক্ষমতা সর্বোচ্চ নেতার হাতে। তিনিই বৈদেশিক বা পারমাণবিক নীতির মতো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন এবং সরকারের সমস্ত শাখা, সামরিক বাহিনী, গণমাধ্যম এবং অধিকাংশ আর্থিক সংস্থান নিয়ন্ত্রণ করেন। ২০২২ সালের শেষ দিকে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু হলে গণঅসন্তোষের বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েক মাস ধরে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলতে থাকে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি এসে বিক্ষোভ স্তমিত হয়ে আসে, কিন্তু এরমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়। এই অস্থিরতায় ভূমিকা থাকার অভিযোগে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করেই সংস্কারপন্থী এবং কট্টরপন্থিদের ক্ষমতার ভিত্তির মধ্যে বিস্তৃত বিভাজন উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কট্টরপন্থি পাঁচ প্রার্থীতো বটেই ম্যধপন্থি পেজেশকিয়ানও কঠোরভাবে খামেনি অনুগত। সংস্কাবাদীরাও ইরানের ইসলামিক শাসনের পক্ষে, তবে তারা পশ্চিমাদের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা, অর্থনৈতিক সংস্কার, সামাজিক উদারীকরণ ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদের পক্ষে। যাইহোক শেষ পর্যন্ত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ নেতা খামেনির অনুগতদের যে প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে সেটি পরিষ্কার।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়