নিজস্ব প্রতিবেদক॥
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে শহিদ পরিবারের সন্তানের বসতঘর ভেঙে কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার হামিদপুর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামানের বাড়িঘর এস্কেভেটর দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় নগদ টাকা, গহনা, গরু, ছাগল ও ধান-গম লুট করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহিদুল ইসলাম মিলন। তার দাবি, ওই জমি তার বেয়াইয়ের। আসাদুজ্জামান জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। তারা নিজেরাই বাড়িঘর ভেঙে দোষারাপ করছে। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবার যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ঘটনায় অভিযোগ দিলেও থানায় তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। তবে পুলিশ বলছে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসাদুজ্জামানের ছোট ছেলে এবিএম জাফরি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের চ্যালা চামুন্ডা দেড় দুইশ’ সন্ত্রাসী শাটার গান, হকিস্টিক, লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িতে এস্কেভেটর লাগিয়ে আটটি বসতঘর, দুইটি রান্নাঘর, তিনটি ফলদগাছ ধ্বংস করে। ভাঙচুর চালিয়ে একটি জমি কেনার জন্য বাড়িতে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা, মা ও ভাবি ও স্ত্রীর ৩০ ভরি সোনার গহনা, তিনটি গরু, ছয়টি ছাগল, প্রায় ৬০ টন ধান ও গম সাত-আটটি ট্রাক্টরের টলিতে করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা ১৫ থেকে ১৬টি মাইক্রোবাস, সাত আটটি ট্রাক্টরের টলি দুইটি জিপ, প্রাইভেটকার ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে হামলা চালায়। বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান বলেন, শহিদুল ইসলাম মিলন আমার বাল্যবন্ধু। সম্প্রতি এই জায়গার সাবেক মালিক নুরুল ইসলাম তার বেয়াই হয়েছেন। নুরুল ইসলামের এই জায়গা শিল্প ব্যাংকে মর্টগেজ ছিল। ১৯৯২ সালে ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে আমরা এই জমিটি ক্রয় করি। সেই থেকে এই জমি ঘরবাড়ি ভোগ দখল করে আসছি। গতবছর শহিদুল ইসলাম মিলন এই জমি দখলের জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসে। তাদের মারপিটে আমার সন্তান আহত হয়। এবার গ্রামবাসীর হাওয়ায় সন্ত্রাসীসহ তিনি পালিয়ে যান। এ বিষয়ে আমরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। আমার বাবা শহীদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে শহীদ হন। আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান। আমাদের উপর এই হামলার বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ঘটনার একদিন পারলেও পুলিশ জড়িতদের কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণে পুলিশ এমন করছে। এমনকি মামলাও নেয়, অভিযোগ হিসাবে তদন্ত করছে। এদিকে, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বেয়াই নূরুল ইসলাম। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বলেন, আমার মালিকানাধীন দুই একর ৯৭ শতক জমি বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (অধুনালুপ্ত শিল্প ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ওই জমি নিলামে ক্রয় করেন আসাদুজ্জামান। কিন্তু তিনি ওই জমি ছাড়াও আমার ও নূর মোহাম্মদের ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। ওই জমিতে আমার নির্মিত বাড়িটিও তারা অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। আমি বাড়ি উদ্ধারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম, এটা কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যে শাস্তি দিবে মাথা পেতে নেব। আমার ছেলেও চারদিন হলো ঢাকায় রয়েছে, তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সন্ধ্যায় ঘটনাটি শুনেছি। আমার বেয়াই নুরুল ইসলাম ওই জমির মালিক। ২৭ বছর ধরে আসাদুজ্জামান দখল করে রেখেছে। জমির মালিক নুরুল ইসলাম জমি উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন। তারা ভাঙচুর কিংবা লুটপাটে জড়িত নয়। এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তারা কাউকেই পায়নি। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত চলছে।