১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

জামিন পেয়েও বাদীপক্ষের হুমকিতে বাড়ি ফিরতে পারছে না লোহাগড়ার অর্ধশতাধিক পরিবার

রেজাউল করিম, লোহাগড়া
লোহাগড়ার মঙ্গলহাটা গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল হত্যা মামলার আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েও এখনও বাড়ি ফিরতে পারছে না। বাদী পক্ষের প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া ও হুমকিতে জামিনপ্রাপ্ত আসামীদের পরিবার ও আত্নীয়স্বজনসহ অর্ধশতাধিক পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক লোকজন এখনও বাড়ি ছাড়া। এসব পরিবারের সদস্যরা গত ঈদে কোরবানী দুরে থাক নুন্যতম এক টুকরা মাংস বা সেমাই রান্না করে সন্তান-সন্ততিদের মুখে তুলে দিতে পারেননি। গত শুক্রবার সকালে মোস্তফা কামাল হত্যা মামলার আসামী সাবেক ইউপি মেম্বর ও সেবচ্ছাসেবকলীগ নেতা আকবর হোসেন লিপন মেম্বর পার্শ্ববর্তি শংকরপাশা গ্রামে মামা বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। জানা গেছে, গত ১০মে রাত আটটার দিকে পৌরসভার কুন্দসী এলাকায় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয় মঙ্গলহাটা গ্রামের আকরাম শিকদারের ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ।চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ সংবাদের পর মোস্তফা পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষ লিপন মেম্বর সমর্থিত ৫০টি বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। গবাদি পশুসহ বাড়ীর সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। হত্যার ঘটনায় মোস্তফার ভাই রিজাউল শিকদার বাদী হয়ে ৩০ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনাম আরো ৫-৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ২৩ জন আসামী জামিনে রয়েছে । ২ জন পলাতক এবং বাকিরা জেল হাজতে রয়েছে। এ ব্যাপারে লিপন মেম্বর বলেন, রাতের বেলা কে বা কারা মোস্তফাকে গুলি করে হত্যা করেছে তা তদন্ত না করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমাদের ষড়যন্ত্রমূলক আসামি করা হয়েছে। আসামি পক্ষের প্রায় ৫০টি পরিবারের পুরুষ-মহিলা বাড়ীছাড়া। এসব পরিবারের ঘরে থাকা আসবাবপত্র,ধান-পাট,গরু-ছাগল,টিউবয়েল,পানির মটরসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, এখনও বাড়ি ফিরতে পারছি না, বাদী পক্ষের লোকজন আমাকে খুন করে মোস্তফা খুনের প্রতিশোধ নিবে বলে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ শাহাজান শেখ, হাবিবুর রহমান, পল্টু শেখ, রেহেনা বেগম, আছিয়া বেগম জানান,তাদের ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, ধান,গরু ছাগল,মটর, ঘরের গ্রীলসহ সব কিছু বাদী পক্ষের জিয়াউর শিকদার, রিজাউল শিকদার ও শাহাজাদার নেতৃত্বে লুট করে নিয়ে গেছে। এ ব্যপারে থানায় অভিযোগ দিলেও তা আমলে নেয়নি পুলিশ। আসামি পক্ষের পরিবারের কয়েকজন মহিলা জানান, গত কয়েকদিন আগে তারা পুলিশের উপস্থিতিতে বাড়িতে উঠতে গেলে তাদেরকে মোস্তফার ভাই জিয়াউর, রিজাউল ভাগ্নে শাহাজাদা ,ভগ্নিপতি আকবারসহ বাদী পক্ষের লোকজন বাধা দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখনও বাদীপক্ষের লোকজন আসামি পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর,লুটপাটসহ ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। হামলার ভয়ে অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন বাড়িঘর ফেলে দুই মাস ধরে অন্যত্র বসবাস করছে। তবে মামলার বাদীর ভাই শাহাদত শিকদার বলেন, আসামি পক্ষের লোকজনকে বাড়িঘরে উঠতে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। তিনি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আসামিরা নিজের ইচ্ছায় বাড়িঘর ছেড়ে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন কুমার রায় জানান, ওই এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। কেউ আইন শৃঙ্খলার অবনতি করতে চাইলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। লুটপাটের বিষয় তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়