১৬ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩০শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ব্যক্তির দায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নিচ্ছে কেন?

সম্প্রতি দেশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ এবং নিম্নপদের পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের সব গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যা পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আকারে প্রকাশ হয়। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপির শেষাংশে অনুরোধ জানানো হয়েছে, জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতা নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। গত সোমবার সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করে দেয়া এমন বিবৃতি সমাজে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকির পরিবেশ তৈরি করে। প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের কথা বলাকে সরাসরি সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করে এডিটরস গিল্ড। ব্যক্তির দায় কোনো বাহিনীর নয় বলা হলেও এখানে সরাসরি ব্যক্তির দায়ই পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নিয়েছে বলে এই চিঠিতে প্রকাশ পায়। এডিটরস গিল্ড মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ত্যাগ, জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের সাহসী ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির আক্রমণ, করোনার সময় পুলিশের মানবিক আচরণসহ যাবতীয় ইতিবাচক কাজ গণমাধ্যমে সব সময়ই প্রকাশিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল পদে কর্মরত থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন সম্পদ অর্জন হলে তার তথ্য অনুসন্ধান করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তা প্রকাশের কাজটিও নিশ্চয়ই করবে গণমাধ্যম। আর বড় কথা এই, বিষয়গুলো নিয়ে এখন সরকারি সংস্থাগুলোই তদন্ত করছে। তবে এসব প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিবাদ দিতে পারেন, প্রেস কাউন্সিলেও অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু ঢালাওভাবে দোষারোপ করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বক্তব্য দিয়েছে, তা স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার প্রতি অযৌক্তিক ও অশোভন আক্রমণ। পুলিশের ভালো কাজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন আকারে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম প্রচার করে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ঢালাও প্রতিবাদলিপির মাধ্যমে পারস্পরিক দোষারোপ চর্চার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। অথচ একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে গণমাধ্যম যেন অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারে। সে জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীসহ সরকারি সব সংস্থার সহযোগিতা আমরা একান্তভাবে কামনা করি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়