প্রতিদিনের ডেস্ক॥
ছাগলকাণ্ডের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের নামে পাওয়া গেল গাজীপুরে ৬০ বিঘা জমির উপর নির্মিত রিসোর্ট। ওই রিসোর্টে সারা বছরই চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। ‘আপন ভুবন’ নামে পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট ও রিসোর্টটি গাজীপুর মহানগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকায়। পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজের অনেক আগে থেকেই টঙ্গী এলাকায় আসা-যাওয়া ছিল। সেই সূত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে রাজধানীর উত্তরা থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পূবাইলের খিলগাঁও এলাকায় মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ৩৫ বিঘা জমি কেনেন আমিনুল। পরে আরো কিছু জমি ক্রয় এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে ৬০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন ‘আপন ভুবন’ নামে পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বিলাসবহুল কটেজ ও বিভিন্ন রাইডসহ অনেক স্থাপনা। এখানে আছে ১৮টি কটেজ। প্রতিটির ভাড়া এক রাতের জন্য ৭ হাজার টাকা। এছাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকার টিকেট কেটে সারা দিন সেখানে সময় কাটানো যায়। আছে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও। পার্কটি দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত আছেন একজন তত্ত্বাবধায়কসহ ১২ জন কর্মচারী। ঘুরে দেখার জন্য তেমন কিছু না থাকলেও ঢাকার কাছে সকাল-সন্ধ্যা সময় কাটানোর জন্য এবং অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য পরিচিতি লাভ করেছে পার্কটি। স্থানীয় বাসিন্দা ও অটোচালক খোরশেদ আলম বলেন, এখানে জমি কেনার সময় মতিউর রহমান বলেছিলেন শিল্পকারখানা করবেন। যার কারণে মানুষ আগ্রহ হয়ে জমি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি এখানে পার্ক তৈরি করেন। ‘আপন ভুবনে’ প্রবেশ করতেই গেটে বসে থাকা আব্দুর রশিদ বলেন, ভেতরে প্রবেশ করতে হলে ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট নিতে হবে। এরপর জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপন ভুবনের মালিক মতিউর রহমান স্যার। আগে তিনি প্রতি সপ্তাহেই এখানে আসতেন। তবে তার স্ত্রী খুবই কম আসেন। আব্দুর রশিদ আরো বলেন, পার্কটি চালু হয়েছে প্রায় ১২ বছর হয়ে গেছে। পার্কের পাশেই আমার বাড়ি থাকায় যেদিন পার্কটি চালু হয়েছে সেদিন থেকেই এখানে কাজ করছি। পার্কের ভেতরে একটি ক্যান্টিন চালান মাসুদ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী। তিনিও জানান, এ পার্কের মালিক মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ। দুজনেরই এখানে আসা-যাওয়া আছে।আপন ভুবনের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাজিব মিয়া বলেন, এখানে ৬০ বিঘা জমি রয়েছে। আপনি এখানে যত বড় আয়োজনই করতে চান আমরা ব্যবস্থা করে দিতে পারব। এর জন্য জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে দিতে হবে। আলাদা কটেজ ভাড়া নিতে হবে। পার্কটির মালিক কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটির মালিক মতিউর রহমান, আপনারা তাকে চিনবেন না। আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বড় পার্টিরা জমি কিনতে এলে স্থানীয় একজনের সহযোগিতা লাগে। সেই হিসেবে তাকে (মতিউর রহমান) আমি এখানে সহযোগিতা করেছি। জমির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন এখানে জমির মূল্য ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা কাঠা। তবে তিনি (মতিউর) যখন জমি কিনেছেন তখন ছিল ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা কাঠা।