১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা যেভাবে বাড়ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে নিরীহ মানুষ, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক থেকে শুরু করে কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না। এছাড়া নিজেদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বাইরেও ঘটছে খুনের ঘটনা। গণমাধ্যমে এমন ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখছি। গত ১৮ এপ্রিল নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় কথিত কিশোর গ্যাং ‘এফ টেন’-এর সদস্যরা নিজেরাই বিরোধে জড়ায়। বৈশাখী মেলায় দোকান বসানো নিয়ে নিজেদের বিরোধ থেকে ১৮ বছর বয়সি এক তরুণকে (গ্যাংয়ের সদস্য) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি নোয়াখালী সদর উপজেলায় কথিত কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ বছর বয়সি এক তরুণ খুন হন। নোয়াখালীর ওই দুটি ঘটনার পর কথিত কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এসেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ দ্বদ্বের জেরে জামাল হোসেন নামে এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার নেপথ্যেও কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষ বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে গত ৫ এপ্রিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে হামলায় গুরুতর আহত হন দন্তচিকিৎসক কোরবান আলী। ঘটনার পাঁচ দিন পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কিশোররা আগামীর ভবিষ্যৎ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা গত এপ্রিল মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথিত কিশোর গ্যাংদের তৎপরতা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এখন সারাদেশে ২৩৭টির মতো ‘কিশোর গ্যাং’ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা শহরে, ১২৭টি। এসব গ্যাংয়ের (অপরাধী দল) সদস্য ১ হাজার ৩৮২ জন। ঢাকার পর চট্টগ্রামে রয়েছে ৫৭টি। এসব দলের সঙ্গে জড়িত ৩১৬ জন। এ চিত্র ভাবিয়ে তুলছে আমাদের। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেপরোয়াভাবে সক্রিয় এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্কুল পড়–য়ারা এসব গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। কারণ এই বয়সে ছেলেমেয়েদের আচরণ পরিবর্তিত হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘বড় হয়ে গেছি’ বা ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব চলে আসে। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ জন্য সবার আগে পরিবার তথা মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়- এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়