প্রতিদিনের ডেস্ক॥
ভারতের সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল বিজেপি আবারও ক্ষমতায় এসেছে। সমমনা কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। এই নির্বাচনের পর থেকে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ভোট পরবর্তী সহিসংতার ঘটনা ঘটেছে। এর মাঝেই দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহারে বিজেপির এক নেত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে এবার বিজেপি প্রার্থী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক পরাজিত হয়েছেন। এই আসনটি তৃণমূল দখল করেছে। এরপর জেলার বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল তাদের কর্মীদের ওপর হামলা করছে।
নারী মোর্চার নেত্রীর নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। হাসপাতালে ভর্তি ওই নেত্রীর অভিযোগ, ভোট গণনার পর থেকে তৃণমূল আমাদের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আমার স্বামীকে ঘর ছাড়তে হয়। ২৫ জুন তৃণমূলের কর্মীরা আমাকে বিবস্ত্র করে মারধর করে।
নির্যাতিতার ওপর নিপীড়নের ছবি মোবাইলে ধারণ করে তার ছেলে। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয় বৃহস্পতিবার। পুলিশের বক্তব্য, পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে পুলিশ দাবি করেছে, প্রতিবেশীদের মধ্যে গন্ডগোল বেধেছিল। কয়েকজন নারী নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে নিগৃহীতার কাপড় ছিঁড়ে যায়। পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। যে ফোনে ছবি তোলা হয়, সেটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
যদিও এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্যাতিতার বাবা। তার বক্তব্য, ‘‘আমার মেয়ে বিজেপি করে বলে ভয় দেখাচ্ছিল। মুসলমান হয়ে কেন বিজেপি করবে, এই প্রশ্ন তারা তুলেছিল। মেয়ে কাজ থেকে ফেরার পথে হামলা চালায় তৃণমূলের নারী কর্মীরা। মারধর করে পোশাক ফেলে দেয়। বিবস্ত্র অবস্থায় এক কিলোমিটার হাঁটিয়েছে গ্রামের মধ্যে।
• বিজেপির দাবি
এই ঘটনার তদন্ত দাবি করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নারী কমিশন ও সংখ্যালঘু কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি অবিলম্বে তদন্তকারী দল রাজ্যে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় নারী কমিশন শনিবার কোচবিহারে পৌঁছাচ্ছে। তিন দিনের মধ্যে এই ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট তলব করেছে তারা।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দলীয় ভাবে তদন্তকারী দল তৈরি করেছেন। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তদন্ত দলে রয়েছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়, বিধায়ক মালতি রাভা, শিখা চট্টোপাধ্যায়, নারী মোর্চার সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাফুজা খাতুন ও শশী অগ্নিহোত্রী।
শুক্রবার নির্যাতনের শিকার ওই নেত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন শুভেন্দু অধিকারী ও প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। অগ্নিমিত্রা ও তার সতীর্থরা শনিবার কোচবিহারে পুলিশ সুপারের দপ্তরে যান। তারা স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন। পুলিশের ব্যারিকেড ছিল দপ্তরের বাইরে। রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি নেতাকর্মীরা।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোপালকৃষ্ণ মিনার হাতে স্মারকলিপি দেন বিজেপি নেতারা। অগ্নিমিত্রা অভিযোগ করেন, এই ঘটনাকে পারিবারিক বিবাদ বলে দেখাতে চাইছে তৃণমূল। জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই মণিপুরের মতো। তৃণমূলের প্রতিনিধি দল মণিপুর সফরে গিয়েছিল। এখানে কবে আসবে?
এদিন কোচবিহার বিজেপি কার্যালয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেখান থেকে তার সঙ্গে ফোনে কথা হয় সুকান্ত মজুমদারের।
• তৃণমূলের পাল্টা
তৃণমূলের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। একেবারেই স্থানীয় বিবাদের জেরে ওই নারীকে মারধর করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও জেলার শীর্ষ তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ বলেন, যারা ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে একজন অভিযোগকারী নারীর ভাসুর, একজন নারীও রয়েছেন। এর সঙ্গে তৃণমূলকে জড়িয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। আমাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
মারধরে অভিযুক্ত এক নারীর দাবি, আমরা সম্পর্কে আত্মীয় হই। একটা গন্ডগোল অনেকদিন ধরেই চলছে। ওই নারী আমার দিদিকে কুকথা বলেন। তা নিয়ে ঝগড়া ও পরে ধস্তাধস্তি হয়। সেই সময় ওই অভিযোগকারী নিজেই কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন।