প্রতিদিনের ডেস্ক॥
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা মামলায় চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে নবীন মন্ডল ও পারভেজ নামে দুই আসামির ১৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাসা দেখাশোনা করতেন।ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক তসরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।সোমবার (১ জুলাই) ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পেশকার তানভীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ১৩ জুন আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় নবীন মন্ডল ও পারভেজ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের দুটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ নবীন মন্ডল ও পারভেজ নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তাদের হেফাজত থেকে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার মদ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক এস এম সামসুল কবীর বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এ মামলায় গত ৯ মে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক তসরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের (সংশোধিত ২০২০) ধারা ৩৬ (১) স্মারণি ২৪ (গ), ২৯ (ক), ৩৮ ও ৪১ মোতাবেক অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, গুলশানের একটি বাসায় বিপুল পরিমাণ মদ সংরক্ষণ করে একটি চক্র মাদকের রমরমা কারবার করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় দুই আসামি নবীন মন্ডল ও পারভেজকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার মদ।
মামলাটির তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। চার্জশিটে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ আনা হয়।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মাদক উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাটটি মালিকের অনুপস্থিতিতে আসামি নবীন মন্ডল ও পারভেজ দেখাশোনা করতেন। বেশিরভাগ সময় ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকত। মাঝে মাঝে, বিশেষ করে বিকেলে ও সন্ধ্যার পর কখনো নবীন মন্ডল কখনো পারভেজ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে যেতেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করতেন।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা মামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। তারা এ-ও জানান, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক কারবারের বিষয়ে অবগত আছেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা মদ উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাট দুটির মালিকানা সম্পর্কে জানার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দেয়। চিঠির জবাবে সিটি করপোরেশন একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
গত ৯ মে নব্বই দশকের চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী।