১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

দেশে সামাজিক অস্থিরতার কারণে খুনের ঘটনা বাড়ছে। এমনিতেই উন্নয়নশীল বিশ্বে অপরাধপ্রবণতা বেশি। বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, চুরি ও ডাকাতির মতো সামাজিক অপরাধ। আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকা ইত্যাদি এসব অপরাধের প্রধান কারণ। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি নৃশংস হত্যা ও বিচ্ছিন্ন অপরাধের ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। গত ১৯ মে গাড়িতে করে ঘুরতে বেরিয়ে পেট্রোল ঢেলে স্ত্রী বিলকিসকে পুড়িয়ে হত্যা করে স্বামী। ফেনীর সোনাগাজীতে স্ত্রী সিনথিয়া ইসলাম খুশবুকে গত ১২ জুন সকালে বঁটি দিয়ে জবাই করে খুন করে তার স্বামী। একই দিনে বরিশালের কাউনিয়া পানির ট্যাঙ্ক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে সাড়ে ৫ বছর বয়সি শিশুকন্যা রাবেয়া বসরী রোজা ও তার বাবা নাঈম হাওলাদারের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১১ জুন বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত না দেয়ায় প্রতিবেশীর হামলায় নিহত হন নীলিমা রানী নামে এক নারী। গত ৯ জুন ধামরাইয়ে ৭ বছরের শিশু জিসানকে বলাৎকার করে তার গলায় থাকা রুপার চেইনটি খুলে নেন ঘাতক আল আমিন। এ ঘটনা আড়াল করতে শিশুটির পরিহিত প্যান্টের রশি গলায় পেঁচিয়ে ও মাথার অংশ কাদাযুক্ত মাটির নিচে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় ঘাতক। গত ২ জুন ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে পাওয়া একটি লাগেজ থেকে ওমর ফারুক সৌরভ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের বিচ্ছিন্ন দুই পা ও পলিথিনে মোড়ানো খণ্ডিত মাথাসহ মরদেহ চারটি টুকরো করে লাগেজে ভরে তা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, বর্তমান সময়ে সামাজিক অপরাধপ্রবণতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। মানুষ অনেকটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। ছোট-বড় সব বিরোধেই পৈশাচিকতা চোখে পড়ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক প্রভাব, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও প্রতিযোগিতাসহ নানা কারণে সম্প্রতি সমাজ এবং পারিবারিক পরিমণ্ডলে দ্ব›দ্ব বাড়ছে। যা আগে তেমন প্রকট ছিল না। এছাড়া নিজস্ব ধারণা বজায় রাখতে গিয়ে সমাজ ও পরিবার থেকে পাওয়া নৈতিক মূল্যবোধ ভুলে মানুষ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠছে। মানুষ একে অপরের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হচ্ছে না। অপরের মতামত বা ধারণাকে মূল্য দিচ্ছে না। এসব থেকে সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আমরা আগে দেখেছি, আর্থিক বিষয় নিয়ে বাইরের মানুষের সঙ্গে দ্ব›দ্ব হতে, যা এখন পরিবারে বেশি হচ্ছে। আর্থিক ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী কলহ ও এমনকি নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, আসলে এসব রোধে প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলোই বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থাৎ আইন-আদালতের চেয়ে পারিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই এখানে বেশি প্রয়োজনীয়। আর আমরা যদি এমন না করতে পারি, তাহলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। যা একসময় সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠবে। আমরা মনে করি, সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক তৎপরতা বাড়াতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সমাজে বিদগ্ধজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়