২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

কেশবপুরে আখ চাষে অনেক কৃষক এখন সাবলম্বী

আব্দুল মোমিন, কেশবপুর
কেশবপুরে আখের ব্যাপক বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আখঁ চাষ করে অনেক কৃষক এখন সাবলম্বী হয়েছেন। কেশবপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় লতারি জরা ইশ্বরদী-১৬ ও গ্যান্ডারী জাতের আখ চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় দিনে দিনে আঁখ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। প্রতি বছর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে আঁখের আবাদ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবছর কেশবপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে আঁখ চাষ করেছেন কৃষকরা। কেশবপুরে উৎপাদিত আঁখ বিক্রি করতে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের বাদুড়িয়ায় আখেঁর সর্ববৃহৎ হাট বসে। সড়কের দু’পাশ দিয়ে হাট বসায় যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। দেশের বৃহৎ আঁখ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনার জন্য নিরাপদ বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারী পৃষ্টপোষকতার দাবী জানিয়েছে আঁখ চাষী ও ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার ২৫ জুন সকালে ও দুপুরে উপজেলার ত্রিমোহিনী, মঙ্গলকোট, বসুন্দিয়া, বাদুড়িয়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে আঁখ ক্ষেতে আখঁ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এই অঞ্চলের মাটি আঁখ চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানকার কৃষকরা তাদের ভাগ্য বলাতে ১৯৯৫ সাল থেকে আঁখ চাষ শুরু করে আসছে। আঁখ চাষ করে অনেকেই এখন সাবলম্বী। যে কারণে এই অঞ্চলের কৃষকরা আঁখ চাষের প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠেছে। আখঁ চাষ লাভ জনক হওয়ায় বাদুড়িয়া, মঙ্গলকোট, পাঁচপোতা, বসুন্তিয়া, রামকৃষ্ণপুর, বড়েঙ্গা, পাঁচারই, কেদারপুর, সাগরদাঁড়ী, টিটা মোমিনপুর, ঝিকরা,বেগমপুর ত্রিমোহিনীসহ বিভিন্ন গ্রামে আঁখ চাষ করে থাকে। প্রতি বছর আখেঁর বাম্পার ফলন হলেও ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় চাষীরা তাদের আঁখের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় আঁখ চাষীরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে ২০০০ সালের দিকে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের বাদুড়ীয়া মোড় নামক স্থানে রাস্তার দুই পাশে আঁখের হাট বসিয়ে প্রাথমিক ভাবে আঁখ বেচাকেনা করে আসছে। প্রতিদিন কেশবপুর ছাড়াও যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদাহ জেলা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাদুড়ীয়া হাটে এসে লক্ষ লক্ষ টাকার আঁখ ক্রয় করে নিয়ে যায়। আর এসব আঁখ বহনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক, পিকআপ, নছিমন, করিমন, আলমসাধু সহ বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন চালিত যানবাহন। ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় পাইকাররা এই সড়কের পাশে গাড়ী পার্কিং করে থাকে। যার ফলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। তাই আঁখ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্টোপোষকতায় জায়গা বরাদ্দের জোর দাবী জানিয়েছেন আঁখ চাষী ও ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্দিয়া
গ্রামের আখঁ চাষী রহমত আলী, আহম্মাদ আলী,হাফিজুর রহমান নাজমুল হোসেন,
মাঝেদাদা, ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের চাদড়া গ্রামের ফারুক হোসেন, সোহাগ হোসেন এ প্রতিনিধিকে জানান,তারা প্রতি বছর আখঁ চাষ করেন। আখ চাষে ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ আখঁ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। আখঁ ক্ষেতে সময় মতো কৃষকরা পরিচর্যা সহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে প্রতি বিঘা জমিতে আখঁ রোপণ থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত ১ লাখ টাকা খরচ হয়। আর এ আখঁ বিক্রয় হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। মঙ্গলকোট গ্রামের বাসুদেব জানান, আমার দুই বিঘা জমিতে আখঁ চাষ করা হয়েছে। আখঁ রোপণের ৬/৭ মাস পর আখঁ কাটা শুরু করেন আখঁ চাষীরা। এছাড়া আখঁ ক্ষেতে পেঁয়াজ রসুন সহ বিভিন্ন সবজি রোপণ করা যায়। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, কেশবপুর উপজেলায় এ বছরে ৫০ হেক্টর জমিতে আঁখ চাষ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন বলেন, দক্ষিণ বঙ্গের একটি বৃহত্তম আখেঁর হাট বসে কেশবপুরের বাদুড়িয়া মোড়ে। বাজারের জন্য নির্ধারিত জায়গা না থাকায় সড়কের দু’পাশে আঁখ রেখে বেচা-বিক্রি করে। যার ফলে দুর্ঘটনা আশঙ্কা বাড়ছে। মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। হাট কমিটির পক্ষ থেকে আবেদন পেলে ও আশ পাশে খাসজমি থাকলে বাজার স্থানন্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়