২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ২১.৮৩৮ বিলিয়ন ডলার

প্রতিদিনের ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলারসহ আরো কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ যোগ হয়েছে। ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রিজার্ভ। আইএমএফ এর হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে, ২ হাজার ১৮৪ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মঙ্গলবার (২ জুলাই) এ তথ্য জানানো হয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ জুন গ্রোস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮২ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২ হাজার ১৮৪ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আর এনআইআর (ব্যয়যোগ্য) রিজার্ভ আছে ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১৬ বিলিয়ন ডলার। এই এনআইআর বা নিট রিজার্ভের হিসাব এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু আইএমএফকে দিতো। প্রকাশ করতো না। তবে ঋণ সহায়তা পাওয়ার পর হঠাৎ দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়েছে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।প্রকৃতি যে রিজার্ভ রয়েছে তা থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে দেশের রিজার্ভ এখন প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে। যেকোনো দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।যেভারে রিজার্ভ তৈরি হয়: রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।এর আগে গত ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ সদর দফতরে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ সভায় আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুমোদন দেয়। ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর ভিত্তিক শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে করতে গত ২৪ এপ্রিল আসে আইএমএফ মিশন। সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিকস ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক ও পর্যালোচনা কার্যক্রম শেষে করে। এরপর গত ৮ মে আইএমএফ এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা ঋণের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়।গত বছরের ৩০ জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিন দিন পর আইএমএফ প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করে। আর এবার ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে সংস্থাটি। যা দুই দিনের মধ্যে পাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।এ ঋণের একটি অংশ জলবায়ু তহবিলের, যা বাংলাদেশকেই প্রথম দেওয়া হয়েছে। তাই এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকুক, তা চায় আইএমএফ। এজন্য বাংলাদেশের অনুরোধে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশশিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়। এদিকে, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ায় দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বাড়লো।উল্লেখ্য, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭টি কিস্তিতে আইএমএফের ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিলো। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন ও আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়