২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

যানজট কমাতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

রাজধানীতে তুমুল বৃষ্টিতে নগরবাসীর জীবনে নানা দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে অনেক অলিগলি এবং নিচু এলাকার প্রধান সড়কে পানি জমে যায়। শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। এতে যানবাহনের চাপ বাড়ে রাজধানীজুড়ে। দেখা দেয় জলজট ও দীর্ঘ যানজট। পরীক্ষার সময় যানজটের কারণে হলে ঢুকতে দেরি হচ্ছে। আবার অফিস-আদালতসহ নানা কাজে কর্মজীবীরা সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে যানজট। স্বল্প দূরত্বের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অকারণে দীর্ঘ সময় রাস্তায় বসে ধৈর্যের ব্যাঘাত ঘটছে। এমনকি অনেকের মধ্যে অবসন্নতাও দেখা দিচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না পারায় গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা পেতে দেরি হচ্ছে। ঢাকা মহানগরের জীবনযাত্রা ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। সবচেয়ে প্রকট সমস্যাটি হলো যানজট। যানজট নিরসনে অনেক কথা বলা হচ্ছে, নানা রকমের উদ্যোগের কথাও শোনা যায়; কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। রাজধানীর এ যানজট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ফুটপাত দখল, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে না চলা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপ্রশস্ত সড়ক, ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল ঢাকাকে যানজটের নগরীতে পরিণত করেছে। বরং যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। বিশেষ করে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিপণিবিতান প্রভৃতি জায়গায় যাতায়াত করা এক দুঃসহ যন্ত্রণা। যানজটের কারণে কেবল রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহন প্রতিদিন যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকে। তাতে শ্রমঘণ্টা অপচয়জনিত জাতীয় উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হচ্ছে। এখনই এর থেকে বের হওয়ার পথ তৈরি করতে হবে। না হয় এ শহর দিন দিন মানুষের বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হবে। ট্রাফিক পুলিশ, নগরবিদ, গবেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমন্বয়হীনতার কারণে রাজধানীর যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ছে, আরেক সংস্থা গ্যাস লাইন ঠিক করছে। সমন্বয় করে কাজ করলে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিমালিকানাধীন গণপরিবহন, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল- এসব যানবাহন প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। বক্তারা ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি ব্যবহারে সচেতন হতে বলেন। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর নেই। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরবে। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। বিআরটির সহযোগিতায় অসংখ্য চালক ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে রাস্তায় নামছে। বিআরটিতে চোখের দেখায় ফিটনেস দেয়া বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন জরুরি। রাজধানীতে লাখ লাখ রিকশা চলছে। অবাধে রিকশা ছেড়ে দিয়ে আধুনিক নগরী চিন্তা করা যায় না। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল করে রাস্তা সংকীর্ণ করা থেকে জনগণকে বিরত রাখতে হবে। নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়