২২শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৬ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৮ বছর পূর্ণ হলো সোমবার। দেশি-বিদেশিসহ মোট ২২ জনকে হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার কথা মনে হলে নিহতের স্বজনরা আঁতকে ওঠেন। তারা দাবি করে আসছেন, বিচারকাজ যেন দ্রুত শেষ হয়। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। পরের বছর নভেম্বরের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ মামলার রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ডেথ রেফারেন্স ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে আসে। ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্সের রায় দেন। তাতে নি¤œ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত জঙ্গির সাজা পাল্টে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা আশা করছি, দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম শেষ হবে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে জঙ্গিরা রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে ২০ বিদেশি নাগরিকসহ ৩০-৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে এবং রাতভর হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরদিন সকালে রেস্তোরাঁয় জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। অভিযান শেষে যৌথবাহিনী বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জনকে জীবিত এবং মোট ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। অভিযানে ৬ জঙ্গিও নিহত হয়। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেসব দেশি-বিদেশি মানুষকে, যারা জঙ্গি হামলায় চিরতরে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন। আমরা তাদের স্বজনের প্রতি জানাই সহমর্মিতা। গুলশান হামলার পরপর শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো কয়েকটি জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়েছে। আরো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের সেসব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এখনো আছে। যে চারটি সংগঠন আগে খুব বেশি সক্রিয় ছিল, যারা বিভিন্ন সময় দেশে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের মধ্যে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) তুলনায় আনসার আল ইসলামের তৎপরতা এখন বেশি। এই সংগঠনই এখন ঝুঁকির জায়গা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এ সময়টাকে জঙ্গিরা কাজে লাগিয়েছে অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজে। আনসার আল ইসলাম অনলাইনে এখন ১০০-১৫০টি ওয়েবসাইট পরিচালনা করছে। এগুলোতে নিয়মিত তাদের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। তাছাড়া অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক, এক্স ও ইনস্টাগ্রামেও তারা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থেমে নেই। হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় যারা পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারী এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে, এ রকম অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের দাবি। আমরা আশা করব, হলি আর্টিজানসহ সব জঙ্গি হামলার বিচার যাতে দ্রুত নিষ্পন্ন হয়, তার জন্য সচেষ্ট থাকবেন সংশ্লিষ্টরা। হলি আর্টিজানের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি যাতে এ দেশে আর কোনোভাবেই ঘটতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে আমাদের।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়