১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

সড়ক খননে নৈরাজ্য বন্ধে মনিটরিং জরুরি

রাজধানীতে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে নগরবাসীর ভোগান্তি যেন ছাড়ছে না। এছাড়া কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতির কারণে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল, এলিফেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে, কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। এসব খোঁড়াখুঁড়ির ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নেই কোনো তদারকি। আর বৃষ্টি হলে অবস্থা আরো নাজুক; সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। এতে অভাবনীয় মাত্রায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল ভোরের কাগজের প্রতিবেদনে জানা যায়, খোঁড়াখুঁড়িতে কল্যাণপুরের ১৩ নম্বর সড়কের বেহাল দশা। সড়ক সংস্কার ও নালার নির্মাণকাজ চলছে রাজধানীর উত্তরখানে। প্রায় তিন মাস ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে এলাকাটির শাহ্ কবির মাজার সড়কে। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে টিকাটুলি মোড় পর্যন্ত ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ভূ-গর্ভস্থ কেবল স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া উত্তরা কিংবা মতিঝিল নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের দুঃখ। সরকারি বিধান অনুযায়ী, দেশে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ মাস রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাটি নরম থাকার অজুহাতে এই সময়টাই রাস্তা খননের মাত্রা বেড়ে যায়। ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, দিনে খনন কাজ বন্ধসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে জরিমানার বিধান রাখা হলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই। সেবা কার্যক্রমের স্বার্থে রাজধানীতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি প্রায়ই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে এ ক্ষেত্রে যে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়, তা মেনে নেয়া কঠিন। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যাতে চলাচল উপযোগী থাকে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার দায়িত্ব বর্তায়। এ ক্ষেত্রে সড়ক ভেঙে গেলে যথাসময়ে সংস্কার করা এবং অন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে তা সমাধান করার কথা সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্য করা যায়, খোঁড়াখুঁড়ির সময় সড়কের এক বড় অংশে ফেলে রাখা হয় মাটি, ইটসহ বিভিন্ন সামগ্রী। দীর্ঘ সময় পরও সেসব সরানো হয় না। দিনের পর দিন রাস্তায় ইট-বালু-খোয়া-মাটি পড়ে থাকতে দেখে যে কারো মনে হতেই পারে এসব ‘রাস্তার কোনো মা-বাপ’ নেই। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়া কিংবা রোদ-বাতাসে চারপাশে ধুলার আস্তরণ ছড়িয়ে দিয়ে সব দূষিত করে তোলার এ সংস্কৃতি থেকে কবে মুক্তি পাবে নগরবাসী? আমরা সবাই উন্নত সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখি, সুন্দর-সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাই। এমনিতেই উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে ক্রমেই। আমাদের নাগরিক জীবনে অগণিত সমস্যার সংকট রয়েছে। প্রতিদিনই এসব সমস্যা-সংকট মোকাবিলা করে চলতে হচ্ছে আমাদের। এই সমস্যা-সংকটগুলোর মধ্যে কোনোটিই গুরুত্বহীন নয়। নগরবাসী আর কতদিন এভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে থাকবেন, এটাই হলো প্রশ্ন। নিজেদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়