১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

এনআইডি সংশোধন ও জালিয়াতি

জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এই কার্ডটি জালিয়াতি করে নানা ধরনের অপরাধের খবর গণমাধ্যমে আসছে। এনআইডি জালিয়াতি রোধে কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে একগুচ্ছ নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি। বিশেষ করে মা-বাবা ও শিক্ষার সার্টিফিকেটের সঙ্গে আবেদনকারীর তথ্য মিল না থাকলে এনআইডি সেবা মিলবে না নাগরিকদের। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘ভুয়া এনআইডিতে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ, গ্রেপ্তার ৪ প্রতারক’ শীর্ষক নিউজসহ বিভিন্ন এনআইডি জালিয়াতির ঘটনার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তগুলো সময়োপযোগী। অন্যদিকে অনেক কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় চাকরি হচ্ছে না, কেউ বেতন পাচ্ছেন না, কেউবা ব্যাংকের নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় অনেক হতদরিদ্র ভিজিএফসহ বিভিন্ন ত্রাণ নিতে পারছেন না। এ রকম অসংখ্য সমস্যায় সম্মুখীন সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই ভুলের জন্য ইসির কর্মীরাই দায়ী। তাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। কার্ডের তথ্য সংশোধনের জন্য গুনতে হচ্ছে টাকা। সঙ্গে ভোগান্তি তো আছেই। কার্ড সংশোধনে মাসের পর মাস ও অনেক ক্ষেত্রে বছরও লেগে যাচ্ছে। এমন অবস্থার জন্য দায়ী কে? অদক্ষ কর্মী ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই ভুলের ছড়াছড়ি। যখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন ইসির অদক্ষ কর্মীরা তথ্য সংরক্ষণে যে ভুল করেছেন তারই কারণে আজকে নাগরিকদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তি দূর করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির সেবা কার্যক্রম। ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং নতুন কার্ড মুদ্রণে উপজেলা অফিস, জেলা অফিস, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) কার কী ক্ষমতা তাও নির্ধারিত করা হয় প্রজ্ঞাপনে। তারপরও বিড়ম্বনা কমছেই না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির কিছু মাইনর লুপহোল (ছিদ্র বা ত্রæটি) ব্যবহার করে প্রতারক প্রতারণা করছে। প্রযুক্তি যখন আছে তখন এটির কিছু মিসিংও আছে। এসব মিসিং এড়াতে নিবন্ধনের সময় বায়োমেট্রিক ভালো করে নিতে হবে। প্রোটেকশন দেয়া হচ্ছে, তারপরও কিছু কিছু প্রতারক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রতারণা করছে, আর এ কারণে সতর্কতা অবলম্বনের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিচয়পত্রবিষয়ক শুধু সংশোধনে ভোগান্তি-দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি বন্ধ করাই নয়, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে গত এক দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনকে একই সঙ্গে ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, বিতরণ এবং হালনাগাদকরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে করে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে। বিকেন্দ্রীকরণের কথাও ভাবতে হবে। এনআইডি এখন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও এনআইডি প্রয়োজন। ভুল-ত্রæটি সংশোধনে সহজ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়