২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

লাপাত্তা পরিবহন চাঁদাবাজরা, বাস ভাড়া কমবে আশা যাত্রীদের

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
দুইদিন আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নগরীরর বছিলা ঘাটারচরে ছাত্ররা পিটিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে ঘাটারচর-আব্দুল্লাহগামী প্রজাপতির কাউন্টারম্যান মুন্নাকে। কারণ তিনি গাড়ি প্রতি চাঁদা আদায় করতেন। এখন ঘাটারচর বাসস্ট্যান্ডে কোনো চাঁদাবাজ নেই। নেই পুলিশও। কারণ পুলিশও মোটা অঙ্কের চাঁদা তুলতো বলে অভিযোগ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
এভাবে সরকার পতনের পর বাংলাদেশের চলমান নানা পরিস্থিতির বাঁকবদল হয়েছে। সেইসঙ্গে পরির্তন এসেছে পরিবহন খাতে। দেশের পরিবহন সেক্টরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি সবাই জানেন। কিছু পরিচিত মুখ নিয়মিতভাবে নানা স্থান থেকে চাঁদাবাজি করতো। তবে সেই চাঁদাবাজি নেই। সরকারের অনুগত দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের দেখা নেই সড়কে। চাঁদাবাজিও নেই। ফলে স্বস্তিতে রয়েছে সড়ক সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে জানা যায়, ঘাটারচর থেকে আব্দুলাহপুর রুটে চলাচল করে পরিস্থান পরিবহন। এ পথের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এ রুটে যাত্রী ভাড়া ৭০ টাকা। অথচ ৩৫ কিলোমিটার রুটে ১৬ স্থানে দিতো হতো চাঁদা, যার পরিমাণ ৪৩০ টাকা। এ রুটে ঘাটারচর ১০ টাকা, আরশিনগরে ৪০ টাকা, বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে ২০ টাকা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ২০ টাকা, কলেজ গেটে ৪০ টাকা, আসাদগেটে ২০, শ্যামলীতে ২০ টাকা, মিরপুর ১ নম্বরে ৪০ টাকা, মিরপুর ১০ নম্বর ৪০ টাকা, মিরপুর পূরবী সিনেমা হলের সামনে ২০ টাকা, মিরপুর ১২ নম্বরে ২০ টাকা, কালশী ২০ টাকা, ইসিবিতে ৪০ টাকা, কুর্মিটোলায় ২০ টাকা, এয়ারপোর্টে ২০ টাকা ও আব্দুল্লাহপুরে ৪০ টাকা চাঁদা দিতো হতো।
৪৩০ টাকা মূলত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশকে এ চাঁদা দিতে হতো। এছাড়া রোড খরচ ৮৭০ টাকা। এক বাস থেকেই প্রতিদিন মোট ১ হাজার ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো।
দেখা যায়, প্রধানত সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামেই এ চাঁদাবাজি হতো। এছাড়া সড়ক, মহাসড়ক, বাস-ট্রাক টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো প্রকাশ্যেই। ট্রাফিক পুলিশের একাংশও দীর্ঘদিন থেকেই চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। পরিবহন সেক্টরকে অবৈধ চাঁদাবাজিমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বহুদিন ধরে সর্বমহলে অনুভূত হলেও আজ পর্যন্ত সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এ চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে গ্রুপে গ্রুপে মারামারি, ভাঙচুর এমনকি সশস্ত্র সন্ত্রাসী অপতৎপরতায় হতাহতের ঘটনাও কোনো অংশে কম হয়নি। তারপরও চাঁদাবাজি চলেছে। তবে সেই চিত্র এখন নেই।
পরিস্থানের স্টাফ কাজী সালাউদ্দিন বলেন, আগে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হতো। এখন কোনো চাঁদা দেওয়া লাগে না। চাঁদা নেওয়ার লোক নেই। ১ হাজার ৩০০ টাকা আমাদের পকেটে থাকছে। এতে করে আমরা সুন্দরমতো সংসার চালাতে পারছি।’
একইভাবে প্রজাপতি পরিবহন যাতায়াত করে। এ বাসে চাঁদা আরও বেশি। কাউন্টারে প্রথমেই চাঁদা দিতো হতো ১ হাজার ৩০ টাকা। পাশাপাশি আরও ৪৩০ টাকা সড়কের চাঁদা। পুলিশের চাঁদাবাজিতেও অতিষ্ঠ ছিল সংশ্লিষ্টরা।
প্রজাপতি পরিবহনের বাসচালক মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, বর্তমানে আমরা খুব শান্তিতে আছি। এটা যেন চলমান থাকে। এখন রোড খরচ ১ হাজার ৩০ টাকা লাগে না, লাইনম্যানকে চাঁদা দেওয়াও লাগে না। পুলিশ বাস ধরলেই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মামলা দেওয়া হয়। এখন সেই ঝামেলাও নেই।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করার জন্য অবিলম্বে চাঁদাবাজি চিরতরে বন্ধ করা প্রয়োজন। এ সত্য কথাটা সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অজানা থাকার বিষয় নয়, যাত্রী ও মালামালবাহী যানবাহনে যে চাঁদাবাজি হয়, তার খেসারত দিতে হয় মূলত যাত্রীদের ও পণ্যের ক্রেতা-ভোক্তাদের।নগরীর মালঞ্চ পরিবহনের যাত্রীরাও স্বস্তিতে। তাদের দাবি চাঁদাবাজি বন্ধ হলে সামনে ভাড়াও কমবে।
এ প্রসঙ্গে ধানমন্ডির বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে যারা চাঁদা তুলতো তারা এখন জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। আমার বিশ্বাস চাঁদাবাজি না থাকলে সামনে ভাড়া কমবে। চাঁদাবাজির টাকা কিন্তু আমাদের পকেট থেকেই যায় বাস মালিকেরা নিজের পকেট থেকে দেয় না। কয়েকদিন পুলিশ নেই সমস্যা হচ্ছে এটা বিশ্বাস করি। পাশাপাশি এটাও বিশ্বাস করি সড়কে চাঁদাবাজি নেই বলা চলে। বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে। সড়কের চাঁদাবাজি যেন চিরতরে বন্ধ হয়।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়