৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

মৈত্রী ও সম্প্রীতির মডেল হোক : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশী দেশ। এই দুই দেশের রয়েছে অভিন্ন ইতিহাস। রয়েছে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক মেলবন্ধন। সবার ওপরে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই দেশের মানুষের মধ্যে রক্তের যে বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, তার অবিচ্ছেদ্য সংযোগ। সে কথাই যেন নতুন করে উচ্চারণ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, এটা স্বীকার করে নিতে হবে। কিন্তু সরকারে যে-ই থাক, তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা হবে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ওঠানামার মধ্য দিয়ে গেছে। আর সরকারে যে থাকে, তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সম্পর্কের বিষয়টাকে পারস্পরিক স্বার্থের প্রেক্ষাপট থেকে দেখতে হবে।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একজন প্রাজ্ঞ কূটনীতিক। কূটনীতি বলে, পেছন দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চলতে হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমানের শিক্ষা লাভ করলে তার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের চলার পথ মসৃণ হয়। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির সমীকরণে দুই দেশের অবস্থান নিয়েও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করলে যে কেউ বুঝতে পারবে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের জায়গাটা দুই দেশেরই নিরাপত্তা, উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কতটা জরুরি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে অতীতে যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল, তা অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মানুষে-মানুষে সম্পর্কও এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। ভারতের সরকার ও জনগণ আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়। দুই দেশ একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্ররূপে কাজ করে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, শিল্পকলা ও সংস্কৃতিতে মিল রয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক আজ একটি কার্যকর আন্তরিকতার পর্যায়ে এসেছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা শুধু নয়, সীমান্ত সুরক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময়, মহাকাশ গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, শিপিং, নদীসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার দিগন্ত ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতা, জনগণ, বিশ্লেষক—সবাই এখন উপলব্ধি করে ভৌগোলিক অবস্থান শুধু নয়, ঐতিহাসিক সূত্রেই উভয় দেশের সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। বাংলাদেশ সব সময় প্রতিবেশী হিসেবে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বদলে গেছে। উভয় দেশের মানুষের নিবিড়তম বন্ধুত্বের উষ্ণতায় শান্তি, মৈত্রী ও সম্প্রীতির মডেল হোক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো শক্তিশালী হবে এবং উভয় দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যাবে। প্রতিবেশী দুই দেশ আঞ্চলিক উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে আরো ঘনিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাক।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়