৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাকারীর বিচার করুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে হয়রানিমূলক মামলা না করতে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে। তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এমন নিরপরাধ ব্যক্তিদেরও আসামি করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, চাঁদা না পেয়ে কিংবা ব্যাবসায়িক প্রতিহিংসা অথবা রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতে এসব মামলা করা হচ্ছে। প্রকাশিত তথ্য বলছে, গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের ৪২ জেলায় হত্যা ও সহিংসতার ২৫১টি মামলা করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে ঢালাওভাবে মামলা দেওয়া হয়েছিল। সরকার পতনের পর সেই একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। বিশিষ্ট আইনজীবীদের মতে, যেভাবে মামলা হচ্ছে, সেগুলো ছাত্র আন্দোলনের ফসলকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাঁরা মনে করছেন, ‘এ ধরনের মামলা দিলে কাজ হবে না, টিকবে না। প্রথম ধাপও পার হতে পারবে না। এটা বন্ধ করতে হবে।’ তাঁদের মতে. ‘ব্রিটিশ আমলের মানহানি আইনে এখনো মামলা হচ্ছে এবং কিছুদিন ধরে তা আবার দেখা যাচ্ছে। নতুন স্বাধীনতায় ব্রিটিশ আমলের আইন টেনে আনা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।’ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে দেশে যেভাবে ঢালাওভাবে মামলা করা হচ্ছে, এসব মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবে, এগুলো মিথ্যা মামলা। তিনি বলেছেন, এখনো পুরনো প্রক্রিয়া থেকে পুলিশ বের হতে পারছে না। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আদালতকে সুযোগ দিতে হবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। পাশাপাশি দ্রুত বিচার আইন ছাড়া এই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না। এসব মামলা পরিচালনার জন্য আদালত থেকে নির্দেশনা আসতে হবে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও মনে করেন, গত সরকারের আমলে যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ এটা জনগণের দাবি। কিন্তু যেভাবে মামলাগুলো সাজানো হচ্ছে, এতে সত্যিকারের অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে কি না সে ব্যাপারে সন্দিহান তাঁরা। তাঁদের মতে, যে প্রক্রিয়ায় মামলা হচ্ছে, এতে সত্যিকার অপরাধীরা শাস্তি না-ও পেতে পারে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর খান মনে করেন, যে মামলাগুলো হচ্ছে সেখানে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লোটার সুযোগ খুঁজছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারকে দৃঢ় হতে হবে। যারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করলে মামলাকারীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যাতে কেউ আর মিথ্যা মামলা না করে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়