মাঠ পর্যায়ে সঠিক ও নিয়মিত তদারকির অভাবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খাদ্য তৈরি করছেন। দেশে বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। ভেজাল খাদ্য তৈরিতে রাসায়নিক থেকে শুরু করে ভারী ধাতব পদার্থের মতো এমন উপাদান মেশানো হচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের বাজার তদারকি, মনিটরিং, খাদ্য স্থাপনা পরিদর্শন ও মোবাইল কোর্ট বসানোর ঘটনা পাঁচ হাজার ৪৬০টি।
মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে আট হাজার ৪৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জরিমানা করা হয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ তিন হাজার টাকা। ভোক্তা অধিদপ্তর একই সময়ে প্রায় তিন হাজার ৬০০টি বাজার তদারকি করে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার ৬০০টি প্রতিষ্ঠানকে আইনানুগ শাস্তি দেওয়া হয়। জরিমানা আদায় করা হয় সাত কোটি সাত লাখ টাকা। বিএসটিআই মোট ৪১৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। মামলা করা হয় ৪১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, জরিমানা আদায় করা হয় প্রায় দুই কোটি ১৪ লাখ টাকা। লাইসেন্স দেওয়া প্রতিষ্ঠানে তদারকি বা সার্ভেইল্যান্স করা হয় ৫০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে, আদালতে নিয়মিত মামলা করা হয় প্রায় ৩৫টি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সিলগালা করা হয় চারটি কারখানা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার থেকে ৪৭ ধরনের খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন পরীক্ষাগারে (ল্যাব) পরীক্ষা করে। এর মধ্যে পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল অনুসারে ৩৪টি মানসম্মত ছিল। আর ২৭টিতে বিরূপ ফল পাওয়া যায়। এসব খাদ্যপণ্য সঠিক মানের ছিল না। ১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যে ভেজাল বা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ফলেও বিষ মেশানো হচ্ছে। ফল পাকাতে ব্যবহার করা হয় অত্যন্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ কার্বাইড। আবার ফলের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় ফরমালিন। গাছে থাকতে ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের কীটনাশক বা বিষ। এমনকি বাজারে আনার আগেও সবজি কীটনাশকে চুবিয়ে আনা হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাদ্যে থাকা রাসায়নিক ও ধাতব পদার্থের প্রভাবে মানুষ হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ লিভার ও কিডনির নানা অসুখে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থ হলে যে ওষুধ খেয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে, সেই ওষুধেও ব্যাপকভাবে ভেজাল শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে নকল-ভেজাল ওষুধের কারবার। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আটা, ময়দা, রং ইত্যাদি মিশিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়। এমনকি ইটের গুঁড়ার সঙ্গে নানা ধরনের রং ও কেমিক্যাল মিশিয়েও ওষুধ বানানো হয়। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ভাবতে হবে। দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যেন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা না দেয়, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে।