২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করুন

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক মাস পূর্তির দিন গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নিয়েছিল এই কমিশন, কিন্তু আড়াই বছরেই তাদের বিদায় নিতে হলো। বিদায়ি ব্রিফিংয়ে সিইসি দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্কের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম সাংবিধানিক সাধারণ নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। সামরিক শাসনামলে ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফল নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন সম্মত রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, সূক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনা সমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর মতে, সেই নির্বাচনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধান মতে দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের পর শিগগিরই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
নবগঠিত কমিশনের অধীনে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো নির্বাচনী আইন সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগের ঘোষণাকালে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিদায়ি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছেন, নির্বাচন পদ্ধতিতে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো পৃথকভাবে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক ধরনের জোড়াতালি দিয়ে একের পর এক নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কোনো সরকারই সংবিধান মেনে জাতীয় সংসদ বা অন্যান্য ছোট-বড় কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান করেনি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করার বাধ্যবাধকতা আছে। ২০২২ সালে একটি আইন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো আইন নয়। আগে যে প্রজ্ঞাপন ছিল, এই প্রজ্ঞাপনটিকে আইন হিসেবে সংসদে পাস করা হয়েছে। আইনটি সংশোধন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ আইনটি সঠিক নয়। সঠিক ব্যক্তিদের স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে, যাতে তাঁরা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হন। কোনো দলের প্রতি নয়, কোনো দলের প্রতি তাঁদের আনুগত্য যেন না থাকে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বিগত নির্বাচন কমিশনের সমস্যাটি ছিল মূলত রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে সমস্যা। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর কমিশন ভালো নির্বাচন করতে পারেনি। এটির বড় কারণ হচ্ছে, তারা সরকারের ইচ্ছায় নির্বাচন করেছে। নির্বাচন কমিশন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই শিগগিরই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না, তাদের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন তখনই সম্ভব হবে, যখন রাষ্ট্রের সব বিভাগ, বিশেষ করে প্রশাসন তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করবে। সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, আইনানুগ ও ন্যায়নিষ্ঠ থাকলে তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে। তারা কোনো দলের হয়ে কাজ করবে না।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়