বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর অধিকাংশ খুলেছে। শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতিও অনেকটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। এরআগে শ্রমিক অসন্তোষের মুুখে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এটা ঠিক যে দেশের অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ, সব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেশের পোশাক শিল্পাঞ্চলগুলোয় এখনো অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। ২১৯টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য ৮৬টি কারখানা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বাকি ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। চলমান শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক কারখানা ভাঙচুর ও বন্ধ থাকায় আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স। বাংলাদেশে অর্থনীতির অবস্থা কখনোই খুব ভালো ছিল না। বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) অতীতে যেসব ‘ডুইং বিজনেস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অবস্থান সব সময় নিচের দিকে থেকেছে। গত মার্চে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) বৈদেশিক বাণিজ্যের বাধাবিষয়ক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে ঘুষ, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতাকে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনো দুর্নীতিকে একটি প্রধান বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যবসা শুরুর সূচকে আশপাশের অনেক দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এর জন্যও দায়ী করা হয় দুর্নীতি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে। ব্যবসা পরিচালনায় পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হয় উদ্যোক্তাদের। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না বললেই চলে। বিজনেস ডায়ালগ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্তর্র্বতী সরকারের অর্থ, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হলো দেশের প্রতিটি চেয়ার-টেবিল টাকা চায়। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যবসার বাধা দূর করে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দিতে হবে। দেশের অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ—সব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ গতি না পেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও গতিপ্রাপ্ত হয় না। কারখানাগুলোতে গ্যাসসংকট চরমে উঠেছে। মহাসড়কে যানজট তৈরি হয়েছে, পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। ডলার সংকটের পাশাপাশি এলসি খোলা ও লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপের প্রভাব পড়ছে আমদানি বাণিজ্যে। যে দেশ যত ব্যবসাবান্ধব, সে দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ।
ইতিমধ্যে বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর অধিকাংশ খুলেছে। গতকাল শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ থাকা ৮৬টি কারখানার ৫০টি ইতিমধ্যে খুলেছে। আর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া বাকি ১৩৩টি কারখানার মধ্যে বেশিরভাগ কারখানা খোলা রয়েছে। শুধু ১৩টি কারখানায় এখনো সাধারণ ছুটি রয়েছে। শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নিরাপদ করা হবে। অন্তর্র্বতী সরকারের সুযোগ্য নেতৃত্বে দ্রুত এসব ঘাটতি ও বিশৃঙ্খলা দূর হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা দেশের অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হবে, আমরা আশাবাদী।