প্রতিদিনের ডেস্ক:
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোগাযোগযন্ত্র পেজার বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত ও প্রায় ৩ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৩ হাজার পেজারে একযোগে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। এই ভয়াবহ নিরাপত্তা হুমকির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছে হিজবুল্লাহ। তবে কোনও মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।পেজারকে বিপার বা ব্লিপারও বলা হয়। বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে এটি কাজ করে। এর মাধ্যমে কেবল ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করা যায়। একদম মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য এর ওপর নজরদারি করা কঠিন। তাই হিজবুল্লাহর কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে প্রথম পেজার বিস্ফোরণের তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। এরপর প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপারগুলো বোমার মতো বিস্ফোরিত হতে থাকে।নিহতদের মধ্যে ৮ বছর বয়সী এক মেয়ের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া হিজবুল্লাহর পার্লামেন্টারি সদস্য আলী আম্মারের ছেলে মোহাম্মদ মাহদি আম্মার নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।এদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাদের অন্তত দুইজন যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন।দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ২ শতাধিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলায় আহত হয়েছেন লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মুজতাবা আমানিগতকালের ঘটনাকে হামলা হিসেবে চিহ্নিত করে ইসরায়েলকে দায়ী করছে লেবানন। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলায় সীমান্তবর্তী প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলি ঘর ছেড়েছেন। তাদের ফিরিয়ে নিতে বাড়তি সামরিক শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার।হিজবুল্লাহ তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই অপরাধমূলক আগ্রাসনের জন্য সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েল দায়ী। এই পাপের শাস্তি অবশ্যই তারা পাবে।’লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারিও ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।পেজার বিস্ফোরণের নেপথ্যের কারণ নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারও ধারণা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে এগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। আবার কিছু গণমাধ্যম গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাতে বলছে, এই ভয়াবহ হামলায় ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে।স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া দাবি করছে, বিস্ফোরিত পেজারগুলো মাত্র পাঁচ মাস আগে তাইওয়ান থেকে লেবাননে আসে। তার আগে এগুলো মোসাদের সদস্যদের হাতে কিছু সময় ছিল। তখন যন্ত্রগুলোর ব্যাটারিতে বিস্ফোরক দ্রব্য পিইটিএন স্থাপন করা হয়। এরপর সেগুলো লেবাননে আসে।হিজবুল্লাহর সদস্যদের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, বিস্ফোরণের আগে যন্ত্রগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যন্ত্রগুলোতে স্থাপিত বিস্ফোরকের ওজন মাত্র কয়েক গ্রামের মতো। এগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে আমদানি করা হয়। এসব যন্ত্রে কীভাবে দূর থেকেই বিস্ফোরণ ঘটানো হলো তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।