২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

সংকটে সব সময় পাহাড় কেন টার্গেট

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা খাগড়াছড়ি। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সেই অস্থিরতা শুরু হয় আরেক জেলা রাঙামাটিতেও। দুই জেলায় দফায় দফায় সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের পর আজ দুপুর ২টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় দেশের যেকোনও সংকটময় মুহূর্তে টার্গেট হয়ে ওঠে পাহাড়ের তিন জেলা। তারা বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সম্প্রতি পাহাড়ের সংগঠনগুলোর মধ্যে যে ঐক্যের সুর দেখা দিয়েছিল সেটা ভেঙে দেওয়া মূল টার্গেট কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। এদিকে ১৪৪ ধারা জারির পর পাহাড়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবেন। প্রতিনিধিদলে থাকছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে খাগড়াছড়ির মামুন হত্যার প্রতিবাদে এদিন বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও কলেজ গেট এলাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পরপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাতের গোলাগুলি ও বিকালের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছেন।
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের উদ্যোগ নেন সতেজ চাকমা। কেন পাহাড়ে এই অস্থিরতা জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাহাড়ের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার আছে, যারা যেকোনও সংকটময় মুহূর্তে পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা আনতে চায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫৩ বছর ধরেই এই অস্থিতিশীলতা জিইয়ে রাখা হয়েছে। অশান্ত পরিস্থিতির কারণেই এরা সবসময় আক্রান্ত হয়। পাহাড়ের যে শান্তিচুক্তি সেটা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী বলা হয়। আমরা চাই এখন পাহাড়ি আদিবাসীদের জান-মালের নিশ্চয়তা দেওয়া হোক। দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক।’ পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে দৃশ্যমান ঐক্য দেখতে চায় না যারা, তারাই এবারের অস্থিতিশীলতা ঘটাচ্ছে উল্লেখ করে মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান বলেন, ‘গত মাসের ১৮ তারিখ এবং গত পরশু (১৮ সেপ্টেম্বর) পাহাড়ের ঐক্যবদ্ধ হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাহাড়ে মিছিল করেছে। সেই র‌্যালিটি করা হয় পাহাড়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দিয়ে। কিন্তু পাহাড়িরা ঐক্যবদ্ধ থাকুক এটা কেউই চায়নি কখনও। তাদের মধ্যে যত বিভেদ তৈরি করে রাখা যায়, সেই চেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকে। গত পরশু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুন নিহত হওয়া ও সেটাকে ইস্যু করে দফায় দফায় হামলার ঘটনায় আজ পর্যন্ত ৩ জন নিহত হলো। এ ধরনের অস্থিরতার ফলে কয়েকটা গোষ্ঠী লাভবান হয়। শঙ্কা করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে এই ঐক্যের মিছিল আগামীতে আর বের করতে দেবে না। ফলে এসব বিভেদ সৃষ্টি করে কাদের ফায়দা সেটা খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। সারা দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমতা প্রতিষ্ঠার লড়াই চলমান, তখন পাহাড়ে উদ্দেশ্যমূলক এই বৈষম্য জিইয়ে রাখা হয়।’ প্রকৃত ঘটনা, নেপথ্যে কারা- প্রশ্নের জবাবে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘কী হয়েছে বা হচ্ছে কোনও কিছু এই ডিজিটাল যুগে গোপন থাকবে না। এই সময়ে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি দিচ্ছে তাদেরও শনাক্ত করা হবে। আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শক্ত হাতে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়