সুন্দর সাহা
বেনাপোল বন্দর দিয়ে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত (সরকারির ছুিটর কারণে শুক্রবার বাদে) তিনদিনে ১৫২ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে গেলো। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য পড়ছে ১০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১৮০ টাকা প্রতি কেজি রপ্তানি মূল্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল কাস্টম হাউজের রফতানি গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান। এদিকে, বেনাপোল মৎস্য অফিসের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহবুবুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে ইলিশ রফতানির যে তথ্য সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল এবং অনলাইনে প্রকাশ ও প্রচার করা হচ্ছে তার কোন ভিত্তি নেই। সেটি মনগড়া রিপোর্ট বলে বলে জানা গেছে। বেনাপোল কাস্টম হাউজের রফতানি গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র নিয়ে ইলিশের চালান বুধবার থেকে সন্ধ্যা (সরকারির ছুিটর কারণে শুক্রবার বাদে) শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত বন্দরে আসার পর মান নিয়ন্ত্রণ যাচাই করে ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় কোনো ইলিশ রপ্তানি হয়নি। শনিবারে রফতানি করা হয়েছে ৪০ মেট্রিক টন। এরআগে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিনে রফতানি করা হয় ১১২ দশমিক ৩৬০ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে ৩দিনে ইলিশ রফতানি করা হয়েছে ১৫২ মেট্রিক টন। রোববার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ইলিশ নিতে আগ্রহী হলে রপ্তানি করা হবে। মূলত রোববার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো মাছই আমদানি-রপ্তানি করে না। ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পাবনার দিলালপুরের মেসার্স আহনাফ ট্রেডিং, কক্সবাজার ফিশারিঘাটের জে. এস এন্টারপ্রাইজ, সাতক্ষীরার লাবসার সুমন ট্রেডার্স, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, একই এলাকার স্বর্ণালী এন্টারপ্রাইজ, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস লিমিটেড, পাবনার গোপালপুরের নোমান এন্টারপ্রাইজ, খুলনার রুপসা এলাকার রূপালী সি ফুডস লিমিটেড, যশোরের নড়াইল রোডের জে.বি.এস ফুড প্রোডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও যশোরের জেস টাওয়ারের এম এ পি ইন্টারন্যাশনাল। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর ৪৯ রপ্তানিকারককে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৪৮ জনকে ৫০ মেট্রিক টন করে ও একজনকে ২০ মেট্রিক টন মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। এই অনুমতির মেয়াদ আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। বন্দর সংশিষ্টরা জানান, ২০১২ সালে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়েছিল। পরে আবার শুরু হয়। গত বছর রফতানির অনুমতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিন টন। এ বছর প্রথমে অনুমতি মেলে ৩ হাজার মেট্রিক টনের। পরে সেটি পরিবর্তন করে অনুমতি মিলেছে ২হাজার ৪২২ মেট্রিক টনের। এরপর বুধবার থেকে রপ্তানি শুরু হয়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন ইলিশ রপ্তানিতে দুই দেশের মধ্যে সু-সম্পর্ক বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে। গত বছর রফতানির অনুমতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিন টনের। রফতানি করা হয় মাত্র ৬৩১ মেট্রিক টন ২৪০ কেজি ইলিশ। তবে এবারও সম্পূর্ণ ইলিশ রফতানি করতে পারবে না বলে কয়েকজন অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক জানিয়েছেন। বাজারে ইলিশের দাম চড়া। তারপরও রফতানি খবরে মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় ইলিশ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ১০ মার্কিন ডলার মূল্যে প্রতি কেজি ইলিশ সরবরাহ করছেন। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ১২০০ টাকা। ইতিমধ্যে ইলিশ রফতানি শুরু হয়ে গেছে। তবে, রফতানির দিন এবং পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক সিষ্টি হয়েছে। কেউ সঠিক হিসাব না নিয়ে মনগড়া রিপোর্ট করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের রফতানি গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে বলেন, ‘ইলিশ রফতানি শুরু হয়েছে গত বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রথম দিন বুধবার রফতানি হয়েছে সাড়ে ২৬ মেট্রিক টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত ভারতে গেছে ৮৬ মেটিক টন। শনিবার ইলিশ রফতানি হয়েছে ৪০ মেট্রিক টন। সর্বমোট শনিবার পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ১৫২ মেট্রিক টন ইলিশ। সরকারি ভাবে প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য ধার্য করা হয়েছে ১০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১৮০ টাকা প্রতি কেজি রপ্তানি মূল্য। শুক্রবার বন্ধ রয়েছে আজ থেকে আবার ইলিশ রপ্তানি করা হয়নি।’ এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার সাজিদ মাহমুদ কৌশিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিদিনের কথাকে বলেন, ‘রফতানি গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান যে তথ্য দিয়েছেন সেটিই চূড়ান্ত ও সঠিক তথ্য। উনিই বিষয়টি দেখভাল করছেন এ বিষয়ে সঠিক তথ্য তার কাছ থেকেই পাবেন।’