২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ডলার সংকট কাটাতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগ

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার অল্প সময়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে আশাবাদ তুলে ধরতে পেরেছে। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের একটি হচ্ছে অর্থনীতি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে ডলার সংকট বিরাজ করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একসময়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও তা এই সংকটের কারণে হ্রাস পেয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছে বিরাজ করছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আরো কয়েকটি বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। স্বল্প সময়ে তিনি সেখানে এখন বিশ্বনেতাদের মনোযোগের কেন্দ্রে। আগে থেকেই খ্যাতি ও সমীহ পাওয়া ড. ইউনূস এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন নতুন পরিচয়ে। এবার তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যাঁর সঙ্গেই তাঁর বৈঠক হচ্ছে, সেখানে অর্থনৈতিক সহায়তা ও বাংলাদেশের উন্নয়নে তাঁদের পাশে থাকার আহ্বানকে এগিয়ে রাখছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংস্কারের যেকোনো উদ্যোগে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরেই অন্তত পৌনে সাত বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জোগাড়ের প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই বড় অঙ্কের ডলার পাওয়ার আশ্বাস এসেছে। ফলে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চীনের প্রস্তাবে বড় বিনিয়োগের সোলার প্লান্ট স্থাপন, নেপালের পক্ষ থেকে জলবিদ্যুৎ, জ্বালানি আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তারও আশ্বাস এসেছে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সংস্কারে খরচের জন্য সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার দেবে একেবারে নতুন ঋণ হিসেবে আর বাকি দেড় বিলিয়ন ডলার দেবে আগের প্রকল্পগুলো চালিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে। ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। এর পরও সংস্থাটি ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরো তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এটিকে অর্থনীতিবিদরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তাঁরা মনে করেন, সংকটময় সময়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এক সফরেই পৌনে সাত বিলিয়ন ডলার জোগাড়ের আশ্বাস পাওয়া খুবই আশা-জাগানিয়া। ঋণ সহায়তা দুইভাবে আসবে। একটি নগদ সহায়তা, আরেকটি প্রকল্প সহায়তা। নগদ সহায়তাটি বাজেটে খরচ করা হবে। তবে এই ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। বেশ কিছু জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি ফিরে পেতে চান ব্যবসায়ীরা। পুনরায় জিএসপি পেতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তায় তাঁর ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাতে চান তাঁরা। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর দেশের বাণিজ্যে সুফল নিয়ে আসবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ড. ইউনূসের প্রতি বিশ্বনেতারা যে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন, এর সুফল পাবে দেশের অর্থনীতি। আমাদের প্রত্যাশা, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে, বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাবে, নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে, মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেমে আসবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়