সুন্দর সাহা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল ক্ষেত্র এই বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক মন্দাক্রান্ত জীবনের ছন্দে উৎসবের দুর্লভ সুরের আমেজ ছড়িয়ে সনাতন হিন্দুদের আনন্দময়ী মা শ্রীশ্রী দুর্গা আসছেন বাংলার ঘরে ঘরে। শারদ প্রাকৃতিক মৃন্ময় অঙ্গণে তারই উদাত্ত বাশির সুর। কুমুদ কলহার আর শিউলীর মনোহর হাসিতে ঝরে পড়ছে এক অপূর্ব দীপ্তি। আমাদের দারিদ্র লাঞ্ছিত জীবনে তাই পুলকের জোয়ার। মায়ের আগমনী সুরে সর্বত্র উল্লাসের কলরোল। বৃক্ষশাখে, পুষ্প শোভায়, আকাশে বিক্ষিপ্ত মেঘের আনা-গোনায়, পাখির কলতানে আনন্দ উচ্ছ্বাস। দেশের প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক অবস্থাই উৎসবের গতি প্রকৃতি নির্ণয় করে দেয়। বর্তমান বছরেও এ অবস্থা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। দেবী দুর্গার আরাধনা প্রস্তুতিতে কোন বিশাদের ছায়া নেই। দুঃখে দৈন্যে হতাশায় অপরাজিত বাংলাদেশীদের হৃদয় এখনও শক্তি দায়িনী মহামায়ার আগমনে আনন্দ উচ্ছ্বাসে নতুন স্বপ্ন দেখে। বাঁচার আনন্দে বিহ্বল হয়ে ওঠে, প্রেরণা পায় নতুন সংগ্রামের প্রতি পদে-পদে, প্রতিকুল অবস্থা মোকাবেলায় ফিরে পায় সাহস। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ এদেশের হিন্দু-মুসলমান একাত্মা হয়ে পূজা এবং ঈদ পালন করে একই সাথে হাজার বছরের সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে। শরৎ হেমন্তের সোনা ঝরা সন্ধিক্ষণে শারদীয় উৎসব সনাতন হিন্দুদের সকল প্রকার ক্ষুদ্রতাকে বিসর্জন দিতে পারে। মনুষ্যত্বে জ্যোতির্ময় শিখা যেন তাদের আলোকিত করে এবং প্রত্যেকের জীবনে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ বয়ে আনে। তাই দেশ ও জাতির মঙ্গল এবং কল্যাণ কামনায় আমরা দেশজুড়ে তিন সহস্রাধীক মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। জগৎমাতা শ্রীশ্রী দুর্গা দেবীর আরাধনার শুরু আগামী ১ অক্টোবর শনিবার চলবে ৫ অক্টোবর বুধবার পর্যন্ত। অন্যান্য বছরের মত এবারও মাতৃবন্দনার প্রস্তুতি চলছে বেশ জোরে-শোরেই। কোথাও চলছে প্রতিমায় শিল্পীর তুলির আঁচড়, আবার কোথাও ব্যস্ত সবাই মন্ডপ সাজানো নিয়ে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সবান্ধব উপস্থিতিতে আনন্দ উৎসবে ভরে উঠবে গোটা দেশ। মঙ্গলালোকে পবিত্র হবে প্রতিটি জীবন। এই প্রত্যাশা নিয়েই এবারের শারদীয় উৎসবের আয়োজন করছেন সনাতন হিন্দুরা। এ বিষয়ে যশোর জেলার কেশবপুর শহরের সর্ববৃহৎ আয়োজন চলছে সাহাপাড়া শ্রীশ্রী হরিতলা সম্প্রীতি মন্দিরে। শ্রীশ্রী হরিতলা সম্প্রীতি মন্দিরের সাধারন সম্পাদক ডাঃ কমল কৃষ্ণ চক্রবর্ত্তী দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে বলেন,‘অন্য ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা স্বাড়ম্বরে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন ফুঁটে ওঠে এই মন্দিরের সব আচার-অনুষ্ঠানে। সে কারনেই এই মন্দিরের নাম সম্প্রীতি মন্দির। এবারের শারদীয় দুগাপূজা সম্পর্কে জানতে চাইলে যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট সাস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দীপংকর দাস রতন দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে বলেন,‘ সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ বছর যশোর জেলায় ৬৫২টি মণ্ডপে দুগাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর পূজা মণ্ডবের সংখ্যা ছিল ৭১০ছিল। রাজনৈতিক শক্তি, পূজা উদযাপণ পরিষদ এবং জেলা প্রশাসন একই অভিন্ন উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে এবং স্বতঃস্ফুর্ত আনন্দ উৎসব পরিবেশে আমরা সাড়ম্বরেই মায়ের আরাধনা করতে যাচ্ছি। আমরা প্রত্যেকটি মন্দিরে একটা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে। আমাদের মনে হয় আমরা চমৎকার পরিবেশে মায়ের পূজা-আরাধনা সম্পন্ন করতে পারবো।