সুন্দর সাহা
শার্শা-বেনাপোলের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের সিপাহশালার খ্যাত মাফিয়া ডন রঘুনাথপুরের বাদশা মল্লিক। সীমান্তের ‘কুখ্যাত এই অস্ত্র-মাদক-সোনা পাচারের সম্রাট’ বাদশাকে অবশেষে পাকড়াও করেছে বিজিবি। বাদশা শুধু সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারের সিপাহসালার নয়, ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর তাবদ এমপি-মন্ত্রী এবং বাঘা-বাঘা আওয়ামী লীগ নেতাকে ভারতে পাচার করে অন্তত অর্ধ শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। বিএনপি ঘরাণার একদল সুবিধাবাদিকে ম্যানেজ করে চালিয়েছেন এই মানব পাচার। এতোদিন মাদকের ব্যবসা করে বাদশা হয়ে যায় আন্তঃদেশীয় মাদক পাচারকারীদের সর্দার। তার মধ্যে অস্ত্র পাচার করে এনে সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীনের পোষ্য ক্যাডারদের দিয়ে শার্শা-বেনাপোলকে অশান্ত করে তোলে। যার মাধ্যমে বাদশা বনে যায় এমপি আফিলের সিপাহশালার। যার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে অস্ত্র ও মাদকসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের অসংখ্য মামলা। তারপরও থেমে থাকেনি বেপরোয়া বাদশা। গত এক মাস তার সবচেয়ে বড় ব্যবসা হচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং বড় বড় নেতাদের সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে একজন ওসির তত্তবাবধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালসহ আওয়ামী লীগের রাঘব বোয়ালকে বাদশা সীমান্ত পার করে দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। বাদশা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা-এমপিকে শার্শার ঘিবা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকার সাথে এমপির গাড়ী দুটি। যা দিঘীর পাড়ে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বাড়িতে দীর্ঘদিন ছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে গাড়ী দুটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাট দিয়ে কুখ্যাত বাদশা সিন্ডিকেটের অবৈধ পাচার ব্যবস্যা চলে অবিরত। যশোরের আলোচিত বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেদারসে চলছে তার মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচার। শার্শা-বেনাপোল সীমান্তের অপরাধ জগতের মাফিয়া ডন মাদক সম্রাট বাদশাসহ তার অনুসারিরা। কুখ্যাত বাদশা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাচার হয় সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডির সাথে অন্যান্য পণ্যের চালান। সাবেক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি আফিল উদ্দিনসহ অনেক ঘাট ম্যানেজ করেই বাদশা গড়ে তোলে এই পাচার সাম্রাজ্য। সীমান্তে বিজিবির অভিযান অব্যাহত থাকলেও থেমে নেই বাদশা সিন্ডিকেটের মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচার। সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, বেনাপোলের রঘুনাথ থেকে কলারোয়া পর্যন্ত রয়েছে মাদক সম্রাট বাদশার মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারের রুট। সূত্র আরও জানায়, ফেন্সিডিলসহ মাদকের ব্যবসা করে সীমান্তের ‘কুখ্যাত ফেন্সি সম্রাট’ বাদশা যেমন ধনাঢ্য হয়েছে। তেমনি তার ঘাড়ে রয়েছে হত্যা মামলাসহ মাদক মামলার বোঝা। ইতিমধ্যে হত্যাসহ একডজন মাদক মামলার তথ্য এই প্রতিনিধির হাতে এসেছে। যার মধ্যে একটি মামলায় তার ৩২ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। যে মামলায় কিছুদিন কারা ভোগ করে জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে শুরু করে সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারের ব্যবসা। বেনাপোল পোর্ট থানার রঘুনাথপুরের মৃত কেরামত মল্লিকের পুত্র বাদশা মল্লিক ওরফে বাদশা মিয়া। তার বিরুদ্ধে যে সব মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায় সে গুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নম্বর ২৬/০৮১, তারিখ ২৭/১১/২০২১, ধারা-১৯-৪/১৯(এফ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্রআইনের মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত। জিডি নম্বর-১১৮, তারিখ-০৩/১১/২০২০ইং। এই মামলায় সে সাধারন ডায়েরীতে অভিযুক্ত। ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানার এফআইআর নং-৫০/৩৭১, তারিখ ২৯/০৮/২০১৯। ধারা-৩৬(১) সারণির ১০(গ)/৪১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ মামলায় বাদশা অভিযুক্ত। যশোরের শার্শা থানার মামলা নং-৩৬/২৫১, তারিখ ১৫/০৬/২০১৮ইং। ধারা ৩০২/৩৪, পেনাল কোড-১৮৬০ মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের শার্শা থানার মামলা নং-৯/২২৫, তারিখ ১৪/০৬/২০১৭ইং। ধারা-১৯(১)এর ৩(খ) ১০৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৪৮/৭১৩, তারিখ ২৫/১১/২০১৬ইং। ধারা-১৯(১)এর ৩(খ) ১০৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৪৯/৭১৪, তারিখ ২৫/১১/২০১৬ইং। ধারা-১৯-এর (এ) ১৯৭৮ সালের আস্ত্র আইনের মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৩২, তারিখ-২৮/০৫/২০০৫, এসজিআর নং৩০/০৫, তারিখ ২৫/১১/২০১৬ইং। ধারা-২৫-এর (বি) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় এজাহারে অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৪১/৫১৬, তারিখ-২৪/০৮/২০১৩, ধারা-২৫-(বি)এর ২(বি) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে মাফিয়া ডন বাদশার নামে অসংখ্য মামলা।
সূত্র আরও জানায়, দুই যুগের অধিক সময় ধরে বাদশা মাদক চোরাকারবারী করে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফেন্সিসম্রাট বাদশা ও তার ভাই রশীদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মাদক চোরাকারবারী সহ এলাকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করে। আওয়ামী সরকারের আমলে সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীনের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী দখলদারীসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে গেলেও রাজনৈতিক দাপটে প্রশাসন ছিলো অনেকটা নির্বিকার। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সুচতুর মাদক সম্রাট বাদশা এবং রশীদ খোলস পাল্টিয়ে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে সোনা-অস্ত্র-গাঁজা-ফেন্সি-মদ-গাঁজার ব্যবসা। বেনাপোলের সেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ চোরাকারবারি বিজিবি হাতে আটক হয়েছে। গতকাল রাতে বেনাপোল রঘুনাথপুর সীমান্তের মৃত কেরামত মল্লিকের পুত্র শীর্ষ মাদক-অস্ত্র ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ চোরাকারবারি বাদশা মল্লিক (৫৫) তার নিজ বাড়ি হতে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এর একটি বিশেষ টিম আটক করে। আটকৃত আসামিকে বেনাপোল সদর ক্যাম্পে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ টি মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে ৪৯ বিজিবি কর্তৃক বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস ব্রিফিং করা হবে বলে জানা যায়। বিস্তারিত জানার জন্য ৪৯ বিজিবি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

