২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

জাবির হোটেল ট্রাজেডির ঘটনায় দুর্বল কর্মকর্তার কারনে থেমে গেছে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে হোটেল জাবিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত তদন্ত চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার দু’মাস পার হলেও জানা গেল না প্রকৃত পক্ষে কতজন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। ২৪ জন নাকি আরও অনেক বেশি তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুর্বল তদন্তের কারনে আগুনে পুড়ে নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। থানা সূত্রের দাবি, পুলিশ জোরেসোরে কাজ না করায় এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে মাঠে না নামায় এখনও পরিস্কার হয়নি ওই ঘটনায় কারা জড়িত বা প্রকৃত রহস্য। ওই ঘটনায় নিহতের স্বজনদের দাবি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। কতজন নিহত হয়েছে তার পরিসংখ্যানও অর্কমন্য তদন্ত কর্মকর্তা উদঘাটন করতে পারেনি। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন বিকেলে দুর্বৃত্তরা যশোরে হোটেল জাবির প্যারাডাইজ লিমিটেডের ভেতরে ঢুকে ভাংচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগে ১৫ শিক্ষার্থীসহ ২৪ জন নিহত হন বলে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যা মানতে চাইছেন না যশোরের মানুষ। যশোরবাসীর দাবি মৃত্যুর সংখ্যা অকেন বেশি। দক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে প্রকৃত তদন্ত করা হলে এখানে সেদিন রাতে কতজন নিহত হন তার পরিসংখ্যান বেরিয়ে আসতো। একই সাথে হত্যাসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল লুটপাটের ঘটনা উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। শহরের চিত্রা মোড়ের এ ঘটনার ১৪ দিন পরে ১৯ আগস্ট অজ্ঞাত দুই’শ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। মামলায় বলা হয়, পাঁচ তারকা ও ১৬ তলা বিশিষ্ট হোটেল জাবির প্যারাডাইজ লিমিটেডে অগ্নিসংযোগ করে একজন বিদেশি নাগরিক, ১৫ শিক্ষার্থীসহ ২৪ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। এছাড়া হোটেলের ক্যাশ ভোল্টে থাকা ৯০ লাখ টাকা, একশ’টি ফ্রিজ, একশ’টি স্মার্ট টিভি, ৪৫০ কিলো ভোল্টের দু’টি জেনারেটর, এক হাজার কিলো ভোল্টের একটি ট্রান্সফরমারসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল লুটপাট হয়েছে। এছাড়া সেখানে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কাগজপত্র গান পাউডার ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই দিন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় অনেকটা বিনা বাধায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এদিকে, মামলার পর ঘটনা তদন্তে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হলেও পুলিশ আজেও মাঠে না নামায় তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। ঘটনায় জড়িতরা শনাক্ত হয়নি এখনও। আগুনে দগ্ধ হয়ে করুন পরিণতি ও হত্যার শিকার ২৪ জনের পরিবারের সদস্যরা ঘটনার দ্রত তদন্ত দাবি করেছেন। একইসাথে জড়িতদের শনাক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন। কিন্তু কার কাছে তারা এ দাবি জানাবেন সেটাও তারা বুঝতে পারছেন না। থানা সূত্র জানিয়েছে, হোটেল জাবির প্যারাডাইজ ট্রাজেডির তদন্ত শুরু করলেও কার্যত অগ্রগতি নেই বললেই চলে। লুটপাট করে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি, অগ্নিসংযোগ ও পুড়িয়ে শিক্ষার্থীসহ ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর তারিকুল ইসলাম তদন্ত কার্যক্রম জোরদার না করায় এবং পুলিশি অভিযান এখনও জোরদার না হওয়ায় ওই অগ্নিকান্ড ও জাবির হত্যাকান্ড তদন্তে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি আজো মাঠে নামেননি বা তদন্ত শুরু করেননি বলে সূত্রটি জানিয়েছে। যা নিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর তারিকুল ইসলাম বলেছেন, হোটেল জাবিরে অগ্নি সংযোগ ও ২৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত মিডিয়াকে দেয়ার মত তথ্য তার কাছে নেই। তিনি মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তার মত করে। তদন্তে নতুন কোন রহস্য উদঘাটন হলেই তিনি গণমাধ্যমকে জানাবেন। নিহতের স্বজনদের প্রশ্ন যে কর্মকর্তা তদন্তে এখনও মাঠেই নামেননি তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর এই ট্রাজেডির রহস্য উন্মোচনের প্রত্যাশা করা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর তারিকুল ইসলাম কার ইশারায় বা অদৃশ্য কি কারণে যশোরের ঐতিহ্য ধ্বংসকারীদের সনাক্তে ব্যর্থ হচ্ছেন সেটিই তদন্তের দাবি উঠেছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়