উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানুষের মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আইনটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এরপর আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন-পরিবর্তন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেই নাম দেওয়া হয় সাইবার নিরাপত্তা আইন। এটি হয়ে ওঠে বিরোধী রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের দমনের হাতিয়ার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই আইনটি বাতিলের দাবি জোরদার হয়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় জানায়, সাইবার নিরাপত্তা আইনে ‘স্পিচ অফেন্স’ সংক্রান্ত মামলাগুলো অচিরেই প্রত্যাহার করা হবে। গত বৃহস্পতিবার সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশোধন নিয়ে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আশ্বাস দেন সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ পর্যায়ক্রমে সব ধরনের কালাকানুন (নিবর্তনমূলক আইন) বাতিল করা হবে। আমাদের দেশে গণতন্ত্র সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। ফলে শাসকদের মধ্যে সমালোচনা সহ্য করার মতো সহনশীলতার অভাব দেখা যায়। তাই তারা বরাবরই ভিন্নমত দমনের পথ খোঁজে। আইন মন্ত্রণালয়ের এসংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর অধীনে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত দেশের আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট পাঁচ হাজার ৮১৮টি মামলা চলমান রয়েছে। বর্তমানে স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলা রয়েছে এক হাজার ৩৪০টি। এসব মামলার মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৭৫টি মামলা চলমান রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই আইনে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৪৫১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৯৭ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তাঁদের মধ্যে ২০৯ জন সাংবাদিক জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত এবং ১৯৭ জন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের সাংবাদিক। আমরা মনে করি, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক সব আইন অতি দ্রুত বাতিল করা প্রয়োজন। পাশাপাশি এসব আইনে করা মামলাগুলোও দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হোক
Previous article
আরো দেখুন
জুলাই সনদ নিয়ে আদেশ জারি
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব করা ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ গত বৃহস্পতিবার জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।...
কোনো অপশক্তিই নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না : আইজিপি
প্রতিদিনের ডেস্ক:
পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করার সক্ষমতা কোনো অপশক্তির নেই। মানুষ নির্বাচনমুখী এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।শনিবার...

