১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ভেঙ্গে পড়া সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চার ইউনিয়নের মানুষের চলাচল

আব্দুল আলিম, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচ্চাপ নদীর উপর ভেঙ্গে পড়া বাঁকড়া সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে চার ইউনিয়নের মানুষ। ২০২২ সালের ৪ জুলাই সেতুটি ভেঙে পড়েছিল। এরপর কেটে গেছে দুই বছর দুই মাস। কিন্তু ভেঙেপড়া সেতুটি পুননির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বলছেন, সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। ভেঙে যাওয়া সেতুটি সংস্কার কিংবা পুননির্মাণ এলজিইডি করবে। অপর দিকে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া সড়কটি এলজিইডির। কিন্তু সেতুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নির্মাণ করেছিল। সেতুটির ব্যাপারে ওই মন্ত্রণালয়কেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি এই দপ্তর গুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সেতুটি পার হচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের চার ইউনিয়েনের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরার ফিংড়ি, আশাশুনির বুধহাটা ও সোভনালী এবং কালিগঞ্জের চাম্পাফুল ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ এ সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু সেতুটির মাঝখানের বড় অংশ দেবে যাওয়ায় লোকজনদের এখন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, সেতুটি মাঝ বরাবর দেবে যাওয়ায় উপর দিয়ে নদীর জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হবে। ফলে জোয়ারের সময় পুরুষ মানুষ কাছা মেরে কোন রকমে সেতু পার হলেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েন বিপাকে। একই সাথে এলাকার শতশত শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পার হয়। স্থানীয় কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিবসহ কয়েকজন জানান, তারা নদীর অপর পাড়ের গ্রাম থেকে বাইসাইকেলে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু সেতুর উপর পানি থাকায় তারা বাইসাইকেল পারাপার করতে পারে না। এজন্য বাইসাইকেল পারাপারের জন্য প্রতিবার ১০ টাকা করে দিতে হয়। সামনে আমাদের পরীক্ষা। ভাঙা সেতুর কারণে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুব কষ্ট হয়।
কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক রঘুনাথ কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেতু পারাপার হন। সেতুটি সংস্কার কিংবা নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই। নাকানি-চুবানি খেয়ে এভাবে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। দ্রুত সেতুটি পুননির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এলাকাবাসী জানান, সেতু নির্মাণের আগে মরিচ্চাপ নদী আশাশুনির বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছিল। ডিঙিনৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে মানুষ আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন। কোনো খেয়ানৌকা কিংবা ঘাট না থাকায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হতো। স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবির মুখে বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে কুন্দুড়িয়া ও শোভনালী ইউনিয়নের উত্তরে বাঁকড়াকে সংযুক্ত করে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২২ সালের ৪ জুলাই সেতুটি মাঝ বরাবর দেবে/ভেঙে যায়। আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত এই সেতুটি নির্মাণ করে। মরিচ্চাপ নদী খননের পর নদের প্রস্থ বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি দেবে যায়। বর্তমানে সেতুটির মাঝ বরাবর দেবে মরিচ্চাপ নদীর পানি ছুঁয়েছে। সেতুটির পাশে পলেস্তারা খসে পড়েছে, রডে ধরেছে মরিচা। ফলে সেটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁদের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী আসে বাঁকড়ার অপর পাশ থেকে। প্রতিদিন কয়েক শ’ ছেলে-মেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। সেতুটি সংস্কার না হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন দুই পাশে কাঁচা সড়ক ছিল। নদীটিও ভরাট হয়ে ছোট হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই সড়কটি এলজিইডি পাকা করার পাশাপাশি তাদের তালিকাভুক্ত করে নিয়েছে। ফলে ওই সড়কের ভেঙে পড়া সেতুতে তাঁরা কাজ করতে পারেন না। আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ভাষ্য মতে, ২০১৬ সালে ৫৪ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছিল ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। পাকা করার অনেক আগে থেকেই এটি এলজিইডির সড়ক। তখন যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ করেছিল, তাদেরই সেতুটি সংস্কার বা পুনর্নিমাণ করার কথা। এরপরও জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা নিয়ে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী। কিন্তু তারপর আর কোনো নির্দেশনা আসেনি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়