নিজস্ব প্রতিবেদক॥
যশোর সদরের গোয়ালদহ গ্রামে সাবেক স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন ঘাতক স্বামী সালাউদ্দিন গাজী। শুক্রবার বিকেলে স্ত্রী নুর নাজমাকে হত্যার পর তিনি গা ঢাকা দেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে হন্নে হয়ে খুঁজছিল। রাতে তাকে রাতে যশোর সদর উপজেলার বাগেরহাট এলাকার একটি বাগানে বিষপান অবস্থায় আটক করে হাসপাতালে ভর্তি করেন যশোর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সুলাইমান আক্কাস ও এসআই মাইদুল ইসলামসহ একদল ফোর্স। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খুনি সালাউদ্দিন। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলের দিকে সাবেক স্ত্রী নূর নাজমা বেগমকে রক্তাক্ত অবস্থায় গোয়ালদহ চাঁচড়ার মুকুল ব্রিকসের পাশে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে। চিকিৎসক জানান-তাকে গলাকেটে ও সারা শরীরে এলোতাপাড়ি কুপিয়ে হত্যার চিহৃ রয়েছে। হাসপাতালে আনার বহু আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের ধারণা মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যান তার সাবেক স্বামী সালাউদ্দিন গাজী। হত্যার শিকার নূর নাজমা বেগম (৩০) যশোর সদর উপজেলার গোয়ালদহ মিয়াপাড়া এলাকার মশিউর রহমানের মেয়ে। হত্যার পর আত্মহত্যা করা সালাউদ্দিন গাজী (৪১) একই গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন গাজীর ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নূর নাজমা বেগম ৪ মাস আগে সালাউদ্দিন গাজীকে তালাক দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে সালাউদ্দিন তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন। এরমধ্যে নাজমা একটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা লোন নেন। সেই টাকা নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সালাউদ্দিন কিন্তু নুর নাজমা কোনো অবস্থাতে ওই টাকা হাত ছাড়া করতে চাননি। তিনি বাবার বাড়িতে ৩ সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে সালাউদ্দিন সাবেক শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নূর নাজমা বেগমকে গালাগাল করেন এবং হত্যা করেই ছাড়বে বলে হুমকি দেন। এদিন বিকেলে মাঠে নাজমার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। এ সময় পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই রুবেল হোসেন জানান, শুক্রবার দুপুরে নূর নাজমা বেগম মিয়াপাড়া মুকুল ব্রিকসের দক্ষিণ পাশে ফাঁকা মাঠ থেকে গরু আনতে যান। এ সময় প্রাক্তন স্বামী সালাউদ্দিন তাকে একা পেয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। যশোর ডিবি পুলিশের এসআই সুলাইমান আক্কাস ও এসআই মাইদুল ইসলাম বলেন-ঘটনার পর খুনিকে গ্রেফতার করতে অভিযানে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রাতে খবর আসে ঘাতক সালাউদ্দিন সদরের বাগেরহাট এলাকার একটি বাগানে বিষপান করে পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তাকে আটক করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মর্তুজা মোর্শেদ জানান, ঘাসমারা বিষ খাওয়ায় এবং বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়ার তার মৃত্যু হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার নূর নাজমা বেগম এনজিও থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তোলেন। এই কথা জানতে পেরে টাকা নেয়ার জন্য শুক্রবার নূর নাজমা বেগমের কাছে যান সালাউদ্দিন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে গোলযোগ হয়। একপর্যায়ে মাঠে গরু আনতে গেলে একা পেয়ে সালাউদ্দিন তাকে গলাকেটে হত্যার করে পালিয়ে যান। পরে তিনি বিষপান করেন।