১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

দ্রব্যমূল্যে ভোক্তা দিশাহারা

মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না। কখনো ডিম, কখনো পেঁয়াজ, আলু, সবজি কিংবা কখনো মাছ-মুরগির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ভোক্তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের বাজারের হাল দেখে এটিই স্পষ্ট হয় যে বাজারের ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু বাজারে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে একেকটি নিত্যপণ্যের দাম। সব শ্রেণি-পেশার মানুষই নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে দিশাহারা। কোনো কোনো পণ্যের দাম মাসের ব্যবধানে ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত সেপ্টেম্বর মাসের বাজারদর ও রাজধানীর খুচরা বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৫০ শতাংশ বেড়েছে। ভালো মানের গোল বেগুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ শতাংশ। করলার দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এক মাসের ব্যবধানে টমেটোর দাম কেজিতে ৭৫ থেকে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। পটোলের দাম কেজিতে ৬০ থেকে ৬৭ শতাংশ এবং ঢেঁড়সের দাম কেজিতে ৬৭ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় এখন বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের জীবনে বেশ চাপ সৃষ্টি করছে। দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম না কমাকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা মনে করেন, এর অন্যতম কারণ হলো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব। বাজার সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেখার বিষয়, দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত কি না। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো কি সন্তোষজনক? বাজারে কি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা আছে? মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারের যেসব বিভাগ ও সংস্থা রয়েছে, তাদের কার্যক্রম নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন বাজারকে অস্থির করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। আমদানি ঠিক রেখে সাপ্লাই চেইন সচল রাখার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অন্তর্বর্তী সরকার শুল্কছাড় ও আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার মতো কিছু সুবিধা দিলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ে প্রতি জেলায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের সীমিত জনবল নিয়ে বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে, কিন্তু এই অভিযানেরও বাজারে কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার সাধারণের নাগালের মধ্যে আসবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়