১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ইংরেজির কারণেই যশোরে ফল বিপর্যয়, শতভাগ ফেল ৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রতিদিনের ডেস্ক:
গত বছরের তুলনায় এইচএসসিতে এবার পাসের হার কমেছে যশোর শিক্ষা বোর্ডে। তবে গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার। এবারে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য হওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া করোনা এবং পড়াশোনার জন্যে শিক্ষার্থীরা খুব বেশি সময় পায়নি বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় সারা দেশের মতো যশোর শিক্ষা বোর্ডেরও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৬৪.২৯ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এক লাখ ২২ হাজার ৫১১ জন। পাস করেছে ৭৮ হাজার ৭৬৪।গত বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৯.৮৮ শতাংশ। সেবার পরীক্ষা দেয় ১ লাখ ৯ হাজার ৬৩৪ জন, যার মধ্যে পাস করে ৭৬ হাজার ৬১৬ জন। কিন্তু জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১২২।পরীক্ষার ফলাফলের এই অবস্থার কারণ হিসেবে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. বিশ্বাস মোহাম্মদ শাহিন আহমেদ বলেন, ‘প্রাইমারি ও হাইস্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে সাধারণত অত বেশি উন্নতি করতে পারে না। কলেজপর্যায়ে এসে ইংরেজিতে ভালো করে শেখে। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীরা সময় পেয়েছে মাত্র ১৬ মাস। এই অল্প সময়ে ১৩টি বিষয়ে পড়াশোনা এবং শেখা খুবই দুরূহ কাজ। তা ছাড়া এবারের শিক্ষার্থীরা ২০১৯ সালে জেএসসি পাস করে। ২০২০ সালে মহামারি করোনার কারণে তারা সশরীরে প্রায় দেড় বছর ক্লাস করতে পারেনি। কিছু ক্লাস করেছে অনলাইনে। গত বছরও ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছিল। এবার অন্যান্য বিষয়ে পাসের হার ৯০ শতাংশের হলেও ইংরেজিতে পাস করেছে মাত্র ৬৮ শতাংশ। ইংরেজিতে খারাপ ফলাফল সামগ্রিক ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।’এক প্রশ্নের জবাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘এবার শিক্ষার্থীরা ৭টি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা সেগুলো মূল্যায়নের পাশাপাশি বাকি ৬টি বিষয়ের মূল্যায়ন এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ম্যাপিং করে দিয়েছি।’ বিগত ছাত্র আন্দোলনের কোনও প্রভাব এই ফলাফলে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, ছাত্র আন্দোলন পরীক্ষার ফলাফলে কোনও প্রভাব ফেলেনি।’লাগাতার এমন খারাপ ফলাফল থেকে উত্তরণে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফল নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর। এবারের ফলাফল তুলনামূলকভাবে খারাপ। ভালো ফলাফলের জন্যে এই তিন পক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলবো, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। আপনাদেরই বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করছে, সেইসব শিক্ষকদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন করার পরামর্শের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হবে। ছেলেমেয়েদের পড়ার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হওয়ার প্রয়োজন।’
শতভাগ পাস করেছে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ ৪৭, যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর মহিলা কলেজ ২, একই উপজেলার এসএম হাবিবুর রহমান পৌর কলেজ ১২৭, নড়াইলের গোবরা মহিলা কলেজ ১, যশোরের কেশবপুর উপজেলার টিটা বাজিতপুর এমকেবি মহিলা কলেজ ৩, ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া হাজিরবাগ আইডিয়াল গার্লস স্কুল ৯, খুলনার কয়রা উপজেলার হাদ্দা পাবলিক কলেজ ২, সোনাডাঙ্গা থানার ইসলামাবাদ কলেজিয়েট স্কুল ৬১, সাতক্ষীরা কমার্স কলেজ ৩, সাতক্ষীরার গোবরদাড়ি জর্দিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১, যশোরের চৌগাছা উপজেলার মারুয়া ইউসুফ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৩২, খুলনার খালিশপুর থানার নেভি অ্যাংকরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৫৯ এবং কুষ্টিয়ার সুনুপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী।৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউই পাস করেনি  এ বছর এইচএসসিতে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউই পাস করতে পারেনি। সেগুলো হলো মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মরকা জাগরণ কলেজ ৩, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মডেল মহিলা কলেজ ১, খুলনার তেরোখাদা উপজেলার শাপলা কলেজ ১, সাতক্ষীরার আখরাখোলা আইডিয়াল কলেজ ৩, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার গোপীনাথপুর এমএ খালেক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার নেঙ্গুরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৩ এবং ঝিনাইদহের নাজিরউদ্দিন ইসলামিয়া কলেজের ১ শিক্ষার্থী।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়