২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

পাখির রাজা ফিঙে

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
গাঁও গ্রামের পরিচিত পাখি ফিঙে। এ পাখিকে অঞ্চলভেদে হ্যাচ্ছা পাখি বলে চিনে বা ডাকে। এদের বিচরণ ক্ষেত্র মাঠে-ঘাটে। ফিঙে পাখি মানুষের কাছাকাছি উড়ে বেড়াতে পছন্দ করে। এরা পরিবেশবান্ধব পাখি। মজার বিষয় হল রাখালিরা যখন উন্মক্ত মাঠে গরু, মহিষ ও ছাগল ছেড়ে দিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকে। তখন গবাদি পশুগুলো ঘাস খাওয়ার প্রতি মগ্ন থাকে। তখন ফিঙে পাখিরা পিঠে বসে উড়ে উড়ে ফড়িং, মৌমাছি, পিঁপড়া, ওলু পোকা, পতঙ্গ, মাজরা পোকা, মাকড়সা এবং পঙ্গপালের মতো ফড়িং, পোকামাকড়কে খাইতে দেখা যায়। আবার কৃষক যখন লাঙ্গলের হাল ধরে, এর পেছনে পেছনে ফিঙ্গে পাখি জড়ো হয়ে উন্মুক্ত শুঁয়োপোকাগুলো তুলে তুলে খাওয়ার দৃশ্যও অন্যরকম লাগে। পাখির রাজা ফিঙ্গে অন্যান্য পাখিকে সহ্য করতে পারে না। ফিঙে পাখির চরম শত্র“ হল কাক আর চিল। এ প্রজাতিটি অনেক বড় পাখির প্রতি আক্রমণাÍক আচরণের জন্য বেশ পরিচিত। এদের বাসার কাছে অন্য পাখি আক্রমণ করতে এলে, তাড়াতেও দ্বিধা করে না। তাই অনেক পাখি ফিঙে পাখির বাসা এড়িয়ে চলে। তাদের কিষানরা ফসলের মাঠে শক্ত জাতীয় সুতা টানিয়ে ও বাঁশের শক্ত খুঁটি মাঠজুড়ে পুঁতে দেয়; যাতে ক্ষতিকর অন্য সব পোকামাকড় খেতে পারে। সবার কাছে যেমন-তেমন আমার কাছে প্রিয় পাখি ফিঙে। সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রামের দিকে যাওয়ার পথে, শত শত ফিঙে পাখি লেজ নাড়িয়ে উড়ে উড়ে পোকামাকড় খেতে দেখেছি। পৃথিবীতে প্রায় ২৩ প্রজাতির ফিঙে আছে এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির ফিঙে পাখি পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এ পাখির প্রাধান্য লক্ষণীয়। এদের প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। গাছের খোঁড়লে বাটি আকৃতিতে বাসা তৈরি করে ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৪ দিন। এর লেজসহ ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত কালো। কালোর ওপরে নীলাভ আভায় যেন মনোরম লাগে। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোড়ায় সাদা ফোটা থাকে এবং পা কালচে। এদের অপ্রাপ্ত, বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা দাগ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি একই রকম। অনেকে একে আক্রমণাÍক পাখি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফিঙে পাখি সকালবেলা মধুর সুরে গান গেয়ে মন ভোলাতে পারে। ফিঙে পাখির বৈজ্ঞানিক নাম : ডিক্রুরাস ম্যাক্রোসার্কাস (Dicrurus macrocercus), ইংরেজি নাম : ব্ল্যাক ড্রোনগো (Black Drongo), ড্রোনগো পরিবারের একটি ছোট এশীয় পাসেরিন পাখি। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে ফিঙে পাখি সঙ্গী ছাড়া একা একা বসে থাকে বেশি। এ বিষয়ে অনেক ঘুরে-ফিরে প্রত্যক্ষ করেছি। এ প্রজাতির পাখি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে গণ্য।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়