প্রাকৃতিক পরিবেশের দিক থেকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল ছিল কক্সবাজার। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয় দেওয়ায় সেই পরিবেশ আজ ধ্বংসপ্রায়। স্থানীয় জনজীবনেও নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। কয়েক দশক ধরে আসা আরো অনেক রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা এখন বাংলাদেশের সমাজে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে। এটা এখন স্পষ্ট যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে মায়ানমার এই রোহিঙ্গাদের কোনো দিন ফেরত নেবে না। মায়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার থমাস অ্যান্ড্রুজ গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাখাইনে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জাতিসংঘের গ্র্যান্টেড নিরাপদ অঞ্চল তৈরি এবং তাদের সহায়তা করার উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার থমাস অ্যান্ড্রুজকে তিনি বলেন, রাখাইনের বিদ্যমান সংকট সমাধানে এটি একটি ভালো সূচনা হতে পারে এবং বাংলাদেশে হাজার হাজার নতুন শরণার্থীর প্রবেশ ঠেকাতে পারবে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একটি জেলার একটি অংশে ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ওদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরনের উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জন্ম নিয়েছে। স্বাভাবিক আয়-রোজগারের সুযোগ কম থাকায় রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রায়ই খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়ছে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনিতেই আশ্রয়শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা ক্রমে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। খুনাখুনির পাশাপাশি সেখানে খুপরি ঘরগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। মায়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরো তীব্র হয়েছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমার ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রত্যাবাসন চুক্তি করেছিল, যদিও গত কয়েক বছরে এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। মায়ানমার সব সময়ই প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করেছে। আজ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মায়ানমার সরকারের সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার কোনো চিহ্ন দেখতে পাইনি। তারা শুধু টালবাহানা করেই যাচ্ছে, এমনকি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের অজুহাতে মায়ানমারের সামরিক সরকার ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাটিও স্থগিত করে দেয়। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাকে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রোহিঙ্গা সংকট : প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে
Previous article
Next article
আরো দেখুন
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন
দেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক অস্বস্তিকর স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন দেশের অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে—একদিকে বিনিয়োগে স্থবিরতায় সৃষ্ট...
সুন্দরবনে জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
কামরুজ্জামান মুকুল, বাগেরহাট
সুন্দরবনের লইট্টাখালী খাল থেকে হাফিজুল নামে এক জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। সোমবার (১০ নভেম্বর) ভোরে দুবলার চর সংলগ্ন লইট্টাখালী খাল থেকে তাকে...

