প্রতিদিনের ডেস্ক॥
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি বলছে, জেড আই খান পান্নার আলোচনা, মতামত ও বক্তব্য ঘিরে কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে এ মামলা হতে পারে, যা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত এবং নিন্দনীয়।
রোববার (২০ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় আসক।জেড আই খান পান্না আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে শুরু থেকেই আদালত ও গণমাধ্যমে সরব ছিলেন তিনি।
গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ মামলা করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের।
মামলায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ মামলার ৯৪ নম্বর আসামি।
আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি নানা আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন জেড আই খান পান্না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা নেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে আদালতে শুনানিও করেছিলেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সময় অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন জেড আই খান পান্না। এ সরকারের সংবিধান পুনর্লিখনের পরিকল্পনা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে সংবিধান রচিত হয়েছে, তার ঘোষণাপত্র পাল্টানো যাবে না। সেটি করা হলে যুদ্ধ নয়, মহাযুদ্ধ হবে।
তবে জেড আইন খান পান্নার বিরুদ্ধে এ মামলাকে ‘অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয় বলেছে মানবাধিকার সংগঠন আসক।
সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার বিষয়ে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট সংশ্লিষ্ট জেড আই খান পান্নার আলোচনা, মতামত ও বক্তব্য সংক্রান্ত তার কোনো ভূমিকায় কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে এ ধরনের মামলা দায়ের হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। একই সঙ্গে মামলাটি হয়রানিমূলক বলেও প্রতীয়মান হয়।
আসকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না জীবনভর মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন এবং বলছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।সেখানে বলা হয়, কখনো তিনি ক্রসফায়ার, গুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে কোনো পক্ষের অসন্তষ্টিতে পড়েছেন; আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করতে বিশেষ কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টিতে পড়েছেন।
এদিকে, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
পৃথক বিবৃতিতে ব্লাস্ট বলছে, সম্প্রতি গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নাকে আসামি করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায় ব্লাস্ট।
অন্যদিকে, মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জেড আই খান পান্না গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনার তিন মাস পর আমার বিরুদ্ধে মামলা হলো। এটা কোনো না কোনো প্রভাবশালীর ইন্ধনেই হয়েছে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। অথচ আমি কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলাম।