বিগত সরকারের আমলে ১৫ বছরে দেশে যেসব উন্নয়নকাজ হয়েছে, সেগুলোর কত শতাংশ নিয়ম মেনে হয়েছে এবং সেগুলো কতটা টেকসই হয়েছে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রশ্ন আছে এসব প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়েও। বিশেষজ্ঞরা বিগত সরকারের গ্রহণ করা মেগাপ্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিগত সরকার এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল বেশি। অনেক মেগাপ্রকল্পের ফল জনগণ কখন কতটা ভোগ করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। অথচ এসব প্রকল্পের জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। এখন সেই ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ নিতে হয়েছে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে এবার শুরু হচ্ছে ঋণ পরিশোধের পালা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে ২.৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল, গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনীতিতে আরেকটি চাপ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা রেল সেতু, মেট্রো রেল, দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথসহ বড় বড় মেগাপ্রকল্প যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল, তা সফল হয়নি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যে ফল পাওয়ার কথা, তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। এসব প্রকল্পে ঋণ করে আনা বড় বিনিয়োগ জলে গেছে। এসব প্রকল্প থেকে যে আয় হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে পরিচালনা বাবদ। কর্ণফুলী টানেলে দিনে গড়ে টোল আদায় হচ্ছে ১২ লাখ টাকার মতো। বিপরীতে বার্ষিক খরচ ধরে রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৩৭ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর এসব প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ ক্রমে বাড়ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রো রেল, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো মেগাপ্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরো বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব ঋণের টেকসই হওয়াটা নির্ভর করছে বাংলাদেশের এসব মেগাপ্রকল্পের সুফল আদায় এবং স্থানীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সক্ষমতার ওপর। গত অর্থবছর থেকে আর্থিক হিসাবে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেটি আগের মতো উদ্বৃত্তে আনার পথে ঋণের আসল পরিশোধ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একের পর এক বড় ঋণগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার কারণে আর্থিক হিসাবে আসল পরিশোধ আগামী দিনে বাড়তেই থাকবে। তাঁদের মতে, ঋণের আসল পরিশোধের চাপ মোকাবেলায় সরকারকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অর্থছাড় বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। তবে আগামী বছরগুলোতে অর্থছাড় বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণ পরিশোধে দীর্ঘ সময় পাওয়া যায়, কিন্তু দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার বেশির ভাগ ঋণ তিন থেকে ১৫ বছরে পরিশোধ করতে হয়। দ্বিপক্ষীয় ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়বে। আবার দ্বিপক্ষীয় ঋণের ডাউন পেমেন্টও দিতে হয়, যা এই ঋণকে আরো ব্যয়বহুল করে তোলে। ডলার সংকটের এই মুহূর্তে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ অর্থনীতিতে বড় একটি চাপ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা আসার ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য পলিসিগুলো ঠিক রাখা দরকার।
মেগাপ্রকল্পের ঋণ পরিশোধের চাপ
আরো দেখুন
প্রবাসীদের অবৈধ হওয়ার শঙ্কা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি...
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে...