উৎপল মণ্ডল, শ্যামনগর
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অবৈধ ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।তবে অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কারনে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সদর, আটুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াবেঁকী বাজার, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর বাজার ও ভেটখালী বাজার এর আশপাশের এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে উপজেলা সদরের আদি যমুনা নদী, আটুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া ও রমজাননগরের মালঞ্চ নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন খাল দখল করে প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। রাত-দিন চলছে এসব নির্মাণ কাজ।এবং ক্রমেই তা হচ্ছে দৃশ্যমান। সরকারি পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় এমন অনিয়ম আর আইন বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চললেও ‘পা’ ফেলা দূরত্বে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্তব্যক্তিদের নজরে তা কোনভাবে আসছেই না।
নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে নওয়াবেঁকী বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, কাগজে বন্দোবস্ত যোগ্য ভিন্ন দাগের জায়গা ম্যাপে দেখালেও তারা স্থাপনা নির্মাণ করছে তোহা বাজার অর্থাৎ বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না এমন জায়গায়। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী বিভিন্ন মহলের সহায়তায় ইজারা নিয়ে মূল্যবান পেরিফেরিভুক্ত সম্পত্তিতে ইচ্ছামত আর সি সি প্লিলারসহ ভবনসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় স্থাপনা নির্মাণে অবশ্য পালনীয় কিছু শর্ত থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দ গ্রহণ বা স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হচ্ছে না।নওয়াবেঁকী বাজারের মনিরুল ইসলাম, আবু বাক্কার, আব্দুস সাত্তার, আমজাদ হোসেন ও শ্যামনগর সদরের বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান আজিবরসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ দখলদার সরকারি জায়গা দখলের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে শ্যামনগর উপজেলা সদরের বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান আজিবর আদি যমুনা নদীর তীরে সরকারি জায়গা দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আদি যমুনা নদীর ভেতরেও আমার দলিলের জায়গা রয়েছে। সেই জায়গায় আমি পাকা ভবন নির্মাণ করেছি। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি জায়গা নিয়ে রীতিমত হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যে জড়িয়ে প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সরকারি জায়গায় যা খুশি তাই করছে। আর উপজেলা জুড়ে এমন কর্মকাণ্ড চললেও কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এটেছেন। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, দ্রুতই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যে নওয়াবেঁকী বাজারের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা হয়েছে। এখন যা হচ্ছে প্রশাসনের অগোচরে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, পাউবোর এ সকল জায়গা কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। যারাই অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে তাদের তালিকা তৈরি করে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।