মাহমুদ আহমদ
ইসলাম সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বনেরই শিক্ষা দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা এটাই, তার বান্দারা যেন মধ্যপন্থা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করে। তারা যেন কোনো ভাবেই বাড়াবাড়ি না পায়। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আর (অহংকারবশে) মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং ঔদ্ধত্যের সাথে পৃথিবীতে চলাফেরা করো না। আল্লাহ কোনো অহংকারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলাফেরায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু রাখ। নিশ্চয় সবচেয়ে অপ্রীতিকর স্বর হলো গাধার স্বর’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৮-১৯)।এই আয়াতদ্বয় থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট, আল্লাহ কোনো অহংকারী ও দাম্ভিককে যেমন পছন্দ করেন না অপর দিকে তিনি চান তার বান্দা যেন মধ্যপন্থা অবলম্বন করে।
এ বিষয় পবিত্র কুরআনের অন্যত্রে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থি উম্মতরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যেন তোমরা (গোটা) মানবজাতির তত্ত্বাবধায়ক হও এবং এ রাসুল তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক হয়’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৩)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘তুমি বল, তোমরা আল্লাহ বলে ডাক বা রহমান বলে ডাক, যে নামেই তাকে ডাক, সব সুন্দরতম নাম তাঁরই। আর তুমি তোমার দোয়া অতি উঁচু স্বরেও করো না বা অতি নিম্ন স্বরেও (করো না), বরং এ দুয়ের মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১১০)। তাই আমরা যা কিছুই করি না কেন মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত নবি করিম (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন সহজ। যে কেউ দ্বিনের কাজে বেশি কড়াকড়ি করে তাকে দ্বীন অবশ্যই পরাজিত করে দেয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং দ্বিনের কাছাকাছি হও, আর হাসি মুখে থাক আর সকালে ও রাতের কিছু অংশে ইবাদতের মাধ্যমে সাহায্য চাও’ (বুখারি, কিতাবুল ইমান)।অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি শুনেছি হজরত নবি করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির নেক আমল কখনও তাকে জান্নাতে নিতে পারবে না’। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও না? হুজুর (সা.) বললেন, না, আমাকেও না, যতক্ষণ না আল্লাহর রহমত ও ফজল আমাকে ঘিরে ফেলে। এজন্য তোমরা মধ্যম পন্থা, সিরাতুল মুস্তাকিম অবলম্বন কর এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রয়াস চালিয়ে যাও’ (বুখারি, কিতাবুল মারজা)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো, বাড়াবাড়ি কোরো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ো এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে’ (সহিহ বুখারি)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘একদা তিন ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ইবাদত সম্পর্কে জানার জন্য তার স্ত্রীদের কাছে এলো। তাদের যখন এ ব্যাপারে অবগত করানো হলো, তখন তারা যেন তা কম বলে ভাবল। তারা বলল, ‘আমরা কোথায়, আর রাসুল (সা.) কোথায়! আল্লাহ তো তার সামনের ও পেছনের সব গুনাহই মাফ করে দিয়েছেন।’ তখন তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘আমি আজীবন রাতভর নামাজ পড়ব’, অন্যজন বলল, ‘আমি জীবনভর রোজা রাখব, কখনো রোজা ভাঙব না’, তৃতীয়জন বলল, ‘আমি নারীর সঙ্গ থেকে দূরে থাকব। কখনো বিয়ে করব না।’ রাসুল (সা.) তাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা এরূপ এরূপ কথা বলেছ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে বেশি আল্লাহ ভীরু, বেশি তাকওয়াবান। তবে আমি রোজা রাখি ও রোজা ভঙ্গ করি। নামাজ পড়ি ও ঘুম যাই এবং নারীকে বিবাহ করি। তাই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (সহিহ বুখারি)।
আমরা কি পারি না, আমাদের এই সুন্দর জীবনটাকে কুরআন ও হাদিসের আলোয় গড়ে তুলতে?
আসুন না, আমরা সবাই সবার কল্যাণের চিন্তা করি, কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ির পরিবর্তে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করি। আমরা যদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে মধ্যপন্থার ওপর আমল করে জীবন পরিচালনা করতাম তাহলে হয়ত সমাজে এত নৈরাজ্য আর ঝগড়া-বিবাদ সংঘটিত হতো না।আল্লাহপাক আমাদেরকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার ওপর থেকে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।