প্রতিদিনের ডেস্ক॥
ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনিত প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেছেন, বাংলাদেশ ও দেশের গণতন্ত্রকে বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তারা জাতির জীবনের প্রত্যেকটি অঙ্গনে দুঃশাসনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাস কায়েম করে এ দেশের মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। জামায়াতে ইসলামী বিগত ১৫টি বছর ধরে সকল জুলুম নির্যাতন সয়ে এদেশের মানুষকে সচেতন করেছে। দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বেসিক্যালি একটি সন্ত্রাসী দল। দলটির জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাস ছাড়া কোনদিন টিকে থাকতে পারেনি। আন্দোলনের নামে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সামনে তারা গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিল। এটা নতুন কোন ব্যাপার না। সেই পাকিস্তান আমলে অ্যাসেমব্লির মধ্যে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে পিটিয়ে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শুরু। তারপর সবকিছুর মধ্যে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সব থেকে বড় হাতিয়ার।
তিনি আরো বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে পৈশাচিকভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি মৃত মানুষের লাশের উপর এই পাপিষ্ঠরা নৃত্য করেছে। ২০১০ সালে তারা পিলখানায় দেশের ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী ভারতের বানানো ট্রাইব্যুনালে কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে দেওয়া ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনতা ফুঁসে উঠলে বিক্ষোভরত জনতার বুকে গুলি চালিয়ে তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্তরে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে গভীর রাতে সহস্রাধিক নিরীহ আলেমদের গুলি করে হত্যা করেছে। ২০১৮ সালেও তারা কোটাবিরোধী আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে গুলি করে ছাত্র হত্যা করেছে। সবশেষ আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু করে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত নির্বিচারে দুই হাজারের অধিক ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করেছে।
আজ পিরোজপুর টাউন ক্লাব মাঠে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত ঐতিহাসিক গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা সেক্রেটারী অধ্যক্ষ জহিরুল হকের সঞ্চালনায় ও জেলা আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ এর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও বরিশাল অঞ্চল টিম সদস্য এ কে এম ফখরুদ্দিন খান রাযী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মেজ সন্তান ও আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী, ছারছীনা দরবার শরীফের ছোট পীর সাহেব শাহ মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব।
মাসুদ সাঈদী বলেন, ১৯৮১ সালে প্রেসক্রিপশনে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ধ্বংসের নীল নকশা নিয়ে দিল্লী থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। দেশের বিরুদ্ধে তার সকল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা আবার দিল্লীতেই তার প্রভুর দেশে ফিরে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেছিলো, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, আমি পালাতে জানিনা। সেই তিনি ছাত্র আন্দোলনের মুখে হেলিকপ্টার দিয়ে গণভবন থেকে পালিয়েছে। পালানোর আগে ৭০ লক্ষ মানুষের উপর মিথ্যা মামলা দিয়েছে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার জুলুম নির্যাতনে কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিজ বাসা বাড়িতে ঘুমাতে পারতো না।
তিনি আরো বলেন, কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীকে শেখ হাসিনা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। শুধু আল্লামা সাঈদী-ই নন এদেশের সকল মত ও পথের অসংখ্য আলেমকে গ্রেফতার করে শেখ হাসিনা প্রমান করেছেন তিনি তার পিতার মতোই আলেম বিদ্ধেষী, ইসলাম বিদ্ধেষী। আজকের এই সভা থেকে আমরা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করে বাংলাদেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। নতুন আইন বানিয়ে বিচার করে আমরা শেখ হাসিনার প্রতি কেনো প্রকার জুলুম করতে চাই না। আমরা চাই হাসিনার বানানো আইনে, হাসিনার বানানো ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিচার হোক। এই ট্রাইবুনাল থেকেই শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ আসার পর প্রকাশ্যে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও বরিশাল অঞ্চল টিম সদস্য এ কে এম ফখরুদ্দিন খান রাযী বলেন, সংবিধান মানুষের জন্য। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। যে সংবিধান মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়, এমন সংবিধান হতে পারে না।
বিশেষ অতিথি আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াতের সমাবেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পৈশাচিকভাবে হামলা চালিয়ে দিনে দুপুরে লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। মানুষ হত্যা করা, গুম করা আওয়ামী লীগের নেশায় পরিনত হয়েছিল। শেখ মুজিবও একই কাজ করতো বিধায় তার কন্যা সে পথেই হেটেছে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পিরোজপুর জেলার সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম, জেলার প্রচারও মিডিয়া সেক্রেটারী মো. সোহরাব হোসাইন জুয়েল, জেলার স্থানীয় নির্বাচন বিভাগীয় সেক্রেটারী মো. হাবিবুর রহমান, জেলা ওলামা বিভাগীয় সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল হালিম, দাওয়াহ বিভাগীয় সেক্রেটারী মাওলানা হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা মুসা, দৈনিক পিরোজপুরের আলো পত্রিকার সম্পাদক ড. আব্দুল্লাহীল মাহমুদ, পৌর আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক সেখ, মঠবাড়িয়া উপজেলা আমীর শরীফ মো. আব্দুল জলিল, ভান্ডারিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা আমীর হোসাইন খান, নেছারাবাদ উপজেলা আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, নাজিরপুর উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, পিরোজপুর সদর উপজেলা আমীর মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান, জিয়ানগর উপজেলা আমীর মাওলানা আলী হোসেন, কাউখালী উপজেলা আমীর মাওলানা নজরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পিরোজপুর জেলা সভাপতি মো. মেহেদী হাসান খান, সেক্রেটারী মো. এমরান খান প্রমুখ।