সুন্দর সাহা
যশোরের সীমান্ত শহর বেনাপোলের আলোচিত বিভিন্ন সীমান্তে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাফিয়া ডন গোল্ড নাসির-জসীম-রেজা গং। নাসির বাহিনীর সোনা পাচার সিণ্ডিকেট আবারও শুরু হয়েছে। প্রতিদিন এই সিণ্ডিকেটের সোনার চালান ভারতে যাচ্ছে। একই ভাবে পাল্লা দিয়ে চলছে ওলিয়ার-শফি-মফিজ সিণ্ডিকেটের সোনা-ফেনসিডিল পাচারসহ হিস্যা আদায়। সীমান্তের সূত্রগুলো জানায় পুটখালী ইউনিয়নে অন্ততঃ সাতটি অবৈধ সীমান্তঘাট দিয়ে ফের শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণে সোনা এবং ফেনসিডিলসহ মাদক পাচার। এবার ফেনসিডিল পাচারের নেতৃত্বে রয়েছে পুটখালীর কুখ্যাত চোরাচালান ঘাটের মাদক সিণ্ডিকেটের হোতাদের গুরুর পুত্র বিতর্কিত ওলিয়ার-শফি ও মফিজসহ চিহ্নিত একদাল চোরাচালানী। বর্তমানে আলোচিত পুটখালী ইউনয়নের সব ঘাটের মালিক বনে গেছে বিতর্কিত এই সিণ্ডিকেট। বর্তমানে মাদক এবং সোনা পাচার সিণ্ডিকেটের হোতারা রাতারাতি কোটিপতি হতে বেছে নিয়েছেন ভিন্নপথ। একসময় ঘ্যানা-হাবিবের কর্মচারি হয়ে পুটখালী ফেরে এই ওলিয়ার-শফি ও মফিজ গং। শাহিন চাকলাদারের আশির্বাদপুষ্ঠ ঘ্যানা সিণ্ডিকেটকে বিতাড়িত করে ঘাটের দখল নেয় বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীনের ক্যাডার বাহিনী। যার নেতৃত্বে দেয় নাসির ও রমজান বাহিনী। সে সময় ঘ্যানাকে ছেড়ে এই চক্র নাসির ও রমজানের সোনা এবং ফেনসিডিল পাচারে সহযোগিতা শুরু করে।
সম্প্রতি আলোচিত নাসির-রমজানের সেই কামলা ওলিয়ার- শফি ও মফিজ গং অদৃশ্য শক্তি বলে বনে যায় পুটখালীর সব সীমান্ত অবেধ পকেট ঘাটের মালিক। এ ছাড়াও এই চক্রে আইয়ুব মুন্সি, রহিম, তালেব ও হাফিজুরসহ সক্রিয় একদল চোরাচালানী ও সোনা-মাদক পাচারকারী যোগ দেয়। পুটখালী সীমান্তের শীর্ষ চোরাচালানী বনে ওলিয়ার ওরফে ওলির সিন্ডিকেট মাফিয়া ডন গোল্ড নাসিরের কাছে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে। এই দাবির কারণে নাসির আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে জামিনে বেরিয়ে এলেও সিণ্ডিকেট চালু করতে পারে না। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে ওলি সিণ্ডিকেটকে হিস্যা দিয়ে নাসির-জসিম-রেজা সিণ্ডিকেট শুরু করে মাদক ব্যবসা। এদিকে হিস্যা আদায় ছাড়াও ওলিয়ার- শফি ও মফিজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে সোনার পাশাপাশি ফেনসিডিল-মদ ও গাজার চালান। কখনও রফা করে আবার কখনও গোপনে চলছে এই পাচার প্রক্রিয়া। সীমান্ত গলিয়ে প্রতিরাতে ১০/১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ওলির সিন্ডিকেটে জমা পড়ে। ইতিপূর্বে বিজিবি ও পুলিশের অভিযানে একের পর এক মাদকের চালান আটক হলেও বর্তমানে সেই অভিযান আর চোখে পড়ছে না বলে সীমান্তবাসীর অভিযোগ। আর এ কারনেই থেমে নেই মাফিয়া ডন গোল্ড নাসির-জসীম-রেজা এবং ওলিয়ার-শফি এবং মফিজ সিণ্ডিকেটের সোনা-মাদক পাচার। সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী আওলাদ, সুমন কুমার, ডালিম কুমার, সোহাগ, ইমরাণ, আরিফ, মিন্টু ওরফে মিঠু, খবির, সোহাগ, খোকন এবং রামসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমানে বিপুল পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার করা হচ্ছে। এদের সবার সোনার গন্তব্য ভারতের আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী সীমান্তের ওপারের মাফিয়া বস গৌতম, অপুসাহা, ছোট্টু, রাজিব, ডাকুয়া, আজগার, নাসির ও রবিউলের ডেরা। ঢাকা এবং দুবাইয়ের শীর্ষ সোনা চোরাচালানী সুমন কুমার, ডালিম কুমার, সোহাগ, ইমরাণ, আরিফ ছাড়াও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার করে কুখ্যাত মিন্টু ওরফে মিঠু, সোহাগ, খবির, রাম ও খোকাসহ কয়েকটি সিন্ডিকেটের হোতারা। এদের মাধ্যমে প্রতিদিন মন মন সোনা পাচার হয় বস্ গৌতমের ডেরায়। তবে এই এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি সোনা পাচার করে বাগআঁচড়ার সোনা পাচারকারী কুদ্দুস, পুটখালীর রমজান, জিয়া, রেজা, বারোপোতার রেজা-ওলিয়ার সিন্ডিকেট। বস্ গৌতমের সোনার সবচেয়ে বড় যোগানদাতা, মাফিয়া ডন নাসির, সুমন কুমার, ডালিম কুমার, সোহেল, কুদ্দুস, কামাল এবং রাকেশ ছাড়াও ঢাকা থেকে কুখ্যাত সোহাগ, খবির, রাম ও খোকার পাঠানো বিপুল পরিমাণ সোনার চালান সব ঘাট ম্যানেজ করে প্রতিদিন যে পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার হয়, তার মধ্যে মাত্র কিয়দংশ আটক করা হয়। আবার যে পরিমাণ সোনা আটক হয় তার সবটা ট্রেজারিতে জমা পড়ে না। আটকের পর অর্ধেকটা কখনও তার চেয়ে বেশি অংশ নানা বাহানায় পকেটস্থ করা হয় বলে অভিযোগ। আবার সোনার চালান আটক না করে নগদ নারায়ণে তুষ্ঠ হয়ে অনেকেই আঙুল চোষে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলেও টালবাহানা করে সে সব সোনার চালান আটক করা হয় না বলেও সুনির্দিষ্ট প্রমান মিলেছে। তবে, সোনা নিয়ে যারা আটক হয় তারা ক্যারিংম্যান। রিম্যাণ্ডে তারা পুলিশকে জানায়, ভারতের পুরাতন বনগাঁও এলাকার রামপদ মন্ডলের পুত্র গৌতম মন্ডল এবং বনগাঁও এলাকার অপু সাহা @ অপূর্ব সাহা, সাথে নির্দেশনা মোতাবেক বায়তুল মোকারামের ইতিহাস জুয়েলার্স ও কুঞাজ জুয়েলার্স থেকে উল্লেখিত সোনার চালান নিয়ে ভারতের গৌতম মণ্ডল ও অপু সাহা @ অপূর্ব সাহার কাছে পৌছে দেয়। বিভিন্ন সিন্ডিকেট দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা অবৈধ সীমান্ত ঘাট গলিয়ে ভারতে পাচার করে। সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ থেকে ইছামতি নদী পার করে ভারতে যত সোনা পাচার হয় তার সবটায় মজুদ হয় আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী বস্ গৌতম, কুখ্যাত অপু সাহা, নাসির এবং আজগার শেখের ডেরায়। ভারতের ওপারে বিএসএফ এবং বাংলাদেশের এপারে বিজিবির অভিযানে কখনও কখনও সোনার চালান আটক হলেও সেটি উল্লেখযোগ্য নয়। যা আটক হয় সেটি পাচার করা সোনার কিয়দংশ মাত্র। আবার টাকার পাহাড় গড়তে নিজেরাও অনেক চালান ধরিয়ে দেয় বলে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তারপরও এই চক্র বেপরোয়া। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী ভারতের মাফিয়া ডন বস্ গৌতম এবং কুখ্যাত অপু সাহার নামে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করে যশোরের ডিবি পুলিশ। যে মামলায় সোনার যোগানদাতা হিসেবে ঢাকার সোনার ডিলার ইমরাণ এবং আরিফের নামও আসামির তালিকায় ছিল। কিন্তু টাকার চাপে সে সব নাম চার্জশীট থেকে বাদ দিয়েছে তৎকালীন পুলিশ কর্তারা। বর্তমানে বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় থাকলেও মাফিয়া নাসির-জসীম-রেজা এবং ওলিয়ার-শফি-মফিজ সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন অভিযানের খবর মেলেনি। একইভাবে মাদক নির্মূলে বেনাপোল পোর্ট থানায় পুলিশেরও তেমন কোন তৎপর নেই বলে সীমান্তবাসীর অভিযোগ। তবে সম্প্রতি পোর্ট থানার কাগজপুর এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে কুখ্যাত নাসির-জসীম সিণ্ডিকেটের সোনার একটি চালান আটক করে। যা কোটি টাকার হাত বদল করে মীমাংসা করে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। আর এ কারণেই থেমে নেই আলোচিত নাসির-জসীম এবং বিতর্কিত ওলিয়ার- শফি এবং মফিজ সিন্ডিেেকটের সোনা- ফেন্সিডিল ও মদ-গাজা পাচার। অর্থের লোভে এই চক্রের সাথে যোগ দিয়েছে আলোচিত রমজান ও রেজা সিণ্ডিকেটের লোকজন। সম্প্রতি মাফিয়া ডন নাসিরের বিরুদ্ধে ১৫ কেজি এবং সাড়ে ৭ কেজি সোনা পাচারের দুটি মামলার চার্জশীট হয়েছে। তারপর থেমে নেই তার সিণ্ডিকেট। যা দেখার যেন কেউ নেই।